বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণ গুলি আলোচনা করো

বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণ গুলি আলোচনা করো

বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো
বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো।

বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণসমূহ

বিংশ শতকে বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে, এর পিছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল-

(ক) পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির শোষণ

দীর্ঘকাল ধরে পশ্চিমি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির শোষণের ফলে উপনিবেশগুলির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। সেখানকার বাসিন্দাদের দুঃখকষ্ট, দারিদ্র, অনাহার, অশিক্ষা প্রভৃতি দুর্দশা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ছিল স্বশাসন।

(খ) পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাব

উপনিবেশগুলিতে পাশ্চাত্য শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাবধারার প্রসারের ফলে বেত্থাম, জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ দার্শনিকদের হিতবাদ ও উদারনীতিবাদের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে উপনিবেশবাসীরা স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার ও জনগণের সার্বভৌমিকতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং ঔপনিবেশিক শাসনের সম্মুখে রুখে দাঁড়ায়।

(গ) পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিরোধিতা

পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বের দোহাই দিয়ে নিজ নিজ উপনিবেশে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল। ফলে উপনিবেশবাসীরা নিজ অস্তিত্ব, নিজ ঐতিহ্যের সংরক্ষণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় এবং পশ্চিমি আগ্রাসনের বিরোধিতায় সরব হয়ে ওঠে।

(ঘ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি জয়লাভ করলেও তারা সামরিক ও আর্থিক দিক থেকে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাই উপনিবেশগুলিকে রক্ষা করার সামর্থ্য তাদের ছিল না।

(ঙ) উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতাদানের প্রতিশ্রুতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি রাষ্ট্র উপনিবেশগুলি থেকে সাহায্যলাভের বিনিময়ে যুদ্ধের পর তাদের স্বাধীনতাদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। যুদ্ধ শেষ হলে উপনিবেশগুলি প্রতিশ্রুতি পালনের দাবি জানায়।

(চ) রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা

সোভিয়েত রাশিয়া উপনিবেশগুলির সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামকে সবদিক থেকেই সহযোগিতা করেছিল। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল যে, এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্যস্বাধীন অনুন্নত দেশগুলিতে উদার অর্থনীতির প্রসার ঘটলে যে মুক্ত দুনিয়া-র সৃষ্টি হবে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাবসাবাণিজ্যের পক্ষে লাভজনক হবে।

(ছ) জাতিপুঞ্জের উদ্যোগ

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উদ্যোগে বহু উপনিবেশের মুক্তি ঘটে এবং স্বাধীন হওয়ার পর তারা জাতিপুঞ্জের সদস্যপদও গ্রহণ করে।

Leave a Comment