অব-উপনিবেশিকরণ বলতে কী বোঝায়? অব-উপনিবেশিকরণের সামাজিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো

অব-উপনিবেশিকরণ বলতে কী বোঝায়? অব-উপনিবেশিকরণের সামাজিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো
অব-উপনিবেশিকরণ বলতে কী বোঝায়? অব-উপনিবেশিকরণের সামাজিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

অব-উপনিবেশবাদ (Decolonisation)

অব-উপনিবেশবাদ একটি বিমূর্ত ধারণা। জার্মান পণ্ডিত মরিৎস জুলিয়াস বন সর্বপ্রথম ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে Decolonisation শব্দটি ব্যবহার করেন। এককথায়, ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিপীড়নের চরম অবস্থা থেকে মুক্তিলাভকেই ‘অব-উপনিবেশিকরণ বলে।

অব-উপনিবেশবাদের সূচনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সাধারণত অব-উপনিবেশিকরণ বা Decolonisation প্রক্রিয়া শুরু হয়। অব-উপনিবেশিকরণের ফলে এশিয়া মহাদেশে আন্তর্জাতিক দিক দিয়ে স্বীকৃত রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিনগুণ। আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বহু উপনিবেশও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে।

স্প্রিংহল-এর বক্তব্য

স্প্রিংহল (Springhall) তাঁর Encyclopedia of Social Sciences-এর ‘সাম্রাজ্যবাদ’ শীর্ষক অংশে অব-উপনিবেশবাদ বলতে বুঝিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কর্তৃক উপনিবেশগুলির রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব সমর্পণকে।

অব-উপনিবেশিকরণের সামাজিক তাৎপর্য

অব-উপনিবেশিকরণের সামাজিক তাৎপর্য ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য-

জাতিবৈরিতা ও বর্ণীবষম্যবাদের গতিরোধ

ঔপনিবেশিক শাসনকালে বৃহৎ শক্তিবর্গ নিজেদের জাতিগত দিক থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করত। ফলে সৃষ্টি হয়েছিল বর্ণবৈষম্যের। অব-উপনিবেশিকরণের ফলে সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রগুলির বাসিন্দারা বর্ণবৈষম্যবাদের ঘোরতর বিরোধী হয়ে ওঠে, গতি রুদ্ধ হয় জাতিবৈরিতা ও বর্ণবৈষম্যবাদের। ফলে আফ্রিকা-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বর্ণবৈষম্যবাদ চিরতরে বিদায় নেয়।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা

এশিয়া-সহ বেশ কয়েকটি উপনিবেশ বিশেষত আফ্রিকার উপনিবেশগুলি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে এবং অভ্যন্তরীণ বিভেদ-দ্বন্দ্বে এতটাই দুর্বল ছিল যে, তারা স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এইরূপ পরিস্থিতিতে তারা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও দেশে সঠিক সুস্থ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব

আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশকিছু উপনিবেশে স্বাধীনতালাভের পর অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিভেদ দেখা দেয়। এই অভ্যন্তরীণ বিভেদ মোড় নেয় গৃহযুদ্ধের দিকে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত ও পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কথা বলা যায়, যে সমস্যার আজও কোনো সমাধান হয়নি।

এলিট গোষ্ঠীর ক্ষমতা বৃদ্ধি

অব-উপনিবেশিকরণের পর সদ্য স্বাধীন দেশগুলিতে এলিট গোষ্ঠীর (Elite Class) আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ঔপনিবেশিক শাসন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা সেদেশের শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী অবস্থাপন্ন এলিট গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়। মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র মানুষ দেশের ক্ষমতালাভে ব্যর্থ হয়। এর ফলে দেশে শিক্ষিত ও ধনীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সামাজিক স্তরের পার্থক্য তৈরি হয়।

আরও পড়ুন – বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কারণ গুলি আলোচনা করো

Leave a Comment