দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা ভাষার ইতিহাস ধ্বনিতত্ত্ব ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর |
ধ্বনিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় কী?
ধ্বনিবিজ্ঞান বাধ্বনির উচ্চারণগত, শ্রুতিগত ও ধ্বনিতরঙ্গগত বিশ্লেষণ করে।
ধ্বনিবিজ্ঞান ও ধ্বনিতত্ত্বের মধ্যে বিশ্লেষণগত পার্থক্য নিরূপণ করো।
ধ্বনিবিজ্ঞান বাধ্বনির উচ্চারণগত, শ্রুতিগত ও ধ্বনিতরঙ্গগত বিশ্লেষণ করে। যেমন ‘প্’ ধ্বনিটি উচ্চারণগতভাবে সৃষ্ট, অঘোষ, অল্পপ্রাণ, ওষ্ঠ্য ধ্বনি।
স্বনিম কাকে বলে?
যেসব ক্ষুদ্রতম ধ্বনিগত এককের মধ্যে মূলধ্বনিগত বিরোধ থাকে, সেই ধ্বনিগত এককগুলির প্রত্যেকটিকে স্বনিম বলে। যেমন ‘ক’, ‘খ’ পৃথক স্বনিম।
বিভাজ্যধ্বনি বলতে কী বোঝো?
ব্যাকরণে ভাষার ধ্বনি বিশ্লেষণের সময়ে বিশ্লেষণের সুবিধার্থে প্রতিটি ধ্বনিকে আলাদা আলাদা খণ্ড একক হিসেবে গণ্য করা হয়। এই খণ্ডগুলিকেই খণ্ডধ্বনি বা বিভাজ্যধ্বনি বলে।
বিভাজ্যধ্বনি কয় ভাগে বিভক্ত ও কী কী?
জিয়া বিভাজ্যধ্বনি দুই ভাগে বিভক্ত। যথা-স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
ধ্বনি ও বর্ণের পার্থক্য কী?
বাগযন্ত্রের সাহায্যে আমরা যা উচ্চারণ করি, তার সামঞ্জস্যপূর্ণ সমষ্টি হল ধ্বনি। ধ্বনির লিখিত সাংকেতিক রূপ হল বর্ণ।
খণ্ডধ্বনির অপর নাম কী?
খণ্ডধ্বনির অপর নাম বিভাজ্যধ্বনি।
স্বরধ্বনি কাকে বলে?
যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য না নিয়ে এবং মুখগহ্বরে কোনো বাধা না পেয়ে নিজেই স্পষ্ট ও পূর্ণভাবে উচ্চারিত হয়, তাকে বলে স্বরধ্বনি।
মুখের মান্য বাংলায় স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা কত?
মুখের মান্য বাংলায় ৭টি স্বরধ্বনি ও ৩০টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে। প্রতিটি স্বরধ্বনি অনুনাসিকভাবে উচ্চারিত হয়। এ ছাড়াও চারটি অর্ধস্বরধ্বনিও বাংলা ভাষায় বর্তমান।
মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
একটিমাত্র স্বরের সাহায্যে গঠিত যে স্বরধ্বনিগুলিকে আর বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। বাংলায় ৭টি মৌলিক স্বরধ্বনি রয়েছে, যথা-অ, আ, অ্যা, ই, উ, এ, ও।
যৌগিক স্বরধ্বনি কাকে বলে?
একটি মৌলিক স্বরধ্বনি ও একটি অর্ধস্বর যখন একসঙ্গে উচ্চারিত হয়, তখন তাকে বলা হয় যৌগিক স্বরধ্বনি বা দ্বিস্বরধ্বনি। যেমন- ঐ(ও+ই) এবং ঔ(ও+উ)।
অঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলি কী কী?
অঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলি হল- খ, ছ, ই, থ, ফ্।
তাড়িত ধ্বনি ও পার্শ্বিক ধ্বনির উদাহরণ দাও।
তাড়িত ধ্বনিগুলি হল-ড়, ঢ়। পার্শ্বিক ধ্বনিটি হল – ল্।
স্বনিম বা ধ্বনিমূল কত প্রকার ও কী কী?
স্বনিম বা ধ্বনিমূল দুই প্রকার। যথা- (১) বিভাজ্য ধ্বনি ও (২) অবিভাজ্য ধ্বনি।
ন্যূনতম শব্দজোড় বলতে কী বোঝো?
দুটি শব্দের মধ্যে যদি একটিমাত্র ধ্বনির ন্যূনতম উচ্চারণ পার্থক্য থাকে, তবে সেই শব্দদুটিকে ন্যূনতম শব্দজোড় বলে। অর্থাৎ ন্যূনতম শব্দজোড়-এর মাধ্যমে স্বনিমগুলিকে চিহ্নিত করা যায়। যেমন-‘তালা-থালা’- ন্যূনতম শব্দজোড়ের ভিত্তিতে এই ‘ত্’-‘থ্’ বাংলায় ধ্বনিমূল বলে শনাক্ত করা হয়।
‘মুক্ত বৈচিত্র্য’ কী?
ধ্বনিমূলের অবস্থান বলতে কী বোঝো?
ধ্বনিমূলের অবস্থান বলতে একটি ধ্বনিমূল শব্দে কোন্ কোন্ অংশে ও কোন্ কোন্ ধ্বনি প্রতিবেশে উচ্চারিত হতে পারে তা বোঝায়।
ধ্বনির সমাবেশ বলতে কী বোঝো?
যে প্রক্রিয়ায় স্বরধ্বনির সঙ্গে অর্ধস্বরের একত্র অবস্থানের ফলে দ্বি-স্বরধ্বনি গঠিত হয় অথবা, দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একত্র অবস্থানের ফলে যুগ্মধ্বনি তৈরি হয় সেই প্রক্রিয়াকে ধ্বনির সমাবেশ বলে।
ধ্বনিমূলের পার্থক্যমূলক অবস্থান বলতে কী বোঝানো হয়?
তার ন্যূনতম শব্দজোড়ে পৃথক ধ্বনিগুলির অবস্থানকে অর্থাৎ একটির জায়গায় অন্যটি উচ্চারিত হয়ে মানে বদলে দিচ্ছে, এইরকম অবস্থানকে ধ্বনিমূলের পার্থক্যমূলক অবস্থান বলা হয়।
‘গুচ্ছধ্বনি’ কাকে বলে?
পাশাপাশি উচ্চারিত স্বরধ্বনিবিহীন দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে গুচ্ছধ্বনি বলা হয়। যেমন-বস্তা, শঙ্কা ইত্যাদি।
চারটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনি বাংলায় ক-টি? উদাহরণ দাও।
বুক্তধ্বনি বলতে কী বোঝো?
যে ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশগুলি শব্দের শুরুতে বা দলের শুরুতে উচ্চারিত হতে পারে, সেগুলিকে যুক্তধ্বনি বলে। যেমন-এ, তৃ, স্ফ ইত্যাদি।
বাংলায় যুক্তধ্বনির সংখ্যা কত?
বাংলায় যুক্তধ্বনির সংখ্যা ২৮টি। তবে অন্য ভাষা থেকে আগত ঋণশব্দে আরও ১৮টি যুক্তধ্বনি পাওয়া যায়।
শ্বাসাঘাত কাকে বলে?
যখন কোনো শব্দের অন্তর্গত কোনো বিশেষ ধ্বনি বা অক্ষরকে উচ্চারণের সময় অপেক্ষাকৃত বেশি জোর দিয়ে উচ্চারণ করা হয়, সেই জোরের মাত্রাকে বলে শ্বাসাঘাত। যেমন-‘অ-তুল-এই শব্দের প্রথম অক্ষর অ-এর উপর শ্বাসাঘাত হয়েছে (‘ চিহ্ন দিয়ে শ্বাসাঘাত দেখানো হয়েছে)।
লোকনিরুক্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
লোকসাধারণের অর্থাৎ অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত জনসাধারণের জ্ঞান ও বিশ্বাস অনুসারে নির্ণীত ব্যুৎপত্তির উপরে নির্ভর করে শব্দের যে ধ্বনি পরিবর্তন হয়, তাকে লোকনিরুক্তি বলে। যেমন-আর্মচেয়ার > আরাম চেয়ার বা আরাম কেদারা।