দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা ভাষার ইতিহাস রূপতত্ত্ব ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর |
‘রূপ’ কী?
‘রূপ’ হল ভাষার সবচেয়ে ছোটো অর্থপূর্ণ একক।
দল কাকে বলে?
বাগ্যন্ত্রের একবারের চেষ্টায় উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিসমূহকে বলা হয় দল। দল অর্থপূর্ণ হতেও পারে আবার নাও পারে। হাসপাতাল শব্দে হাস, পা, তাল এই তিনটি দল আছে।
রূপমূলের দুটি শ্রেণির উল্লেখ করো।
রূপমূলের দুটি শ্রেণি হল স্বাধীন রূপমূল ও পরাধীন রূপমূল।
সহরূপ কী?
রূপের অর্থ না বদলে যখন রূপের বৈচিত্র্য দেখা যায়, তখন সেই বৈচিত্র্যগুলোকে ‘সহরূপ’ বলে। যেমন- টা, টে, টি ইত্যাদি।
রূপিম ও স্বনিমের পার্থক্য লেখো।
রূপিম হল ভাষার ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ ব্যাকরণগত একক। স্বনিম হল ধ্বনির ক্ষুদ্রতম একক।
প্রত্যয় কাকে বলে?
যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি পদ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন পদ তৈরি করে বা কখনো পদের পরিবর্তন করে, তাকে বলে প্রত্যয়।
প্রাতিপদিক কী?
প্রাতিপদিক হল পদের প্রত্যয়যুক্ত অথচ বিভক্তিবিহীন অংশ। যেমন- ‘চলনের’। এখানে ‘চলন’ হল ‘চলনের’ শব্দটির প্রাতিপদিক।
উপসর্গ কাকে বলে?
শব্দের একেবারে শুরুতে যে অব্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে তাকে উপসর্গ বলে। উপসর্গকে অনেক সময় পদের আদিতে বসা তদ্ধিত প্রত্যয়ও বলা হয়।
‘অ’-উপসর্গ যোগ করে পদ গঠন করো।
অ-উপসর্গ যোগে যে পদগুলি পাই-অজানা, অচেনা, অকাজ, অসুখ।
ভিত্তি কী?
বিভক্তি কী?
শব্দের সঙ্গে যা যুক্ত হয়ে শব্দকে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী পদে পরিণত করে এবং বাক্যস্থিত পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করে তাকে বিভক্তি বলে। যেমন- ‘রামের বাড়িতে আজ বিশাল অনুষ্ঠান’-এই বাক্যে ‘এর’ এবং ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে ‘রাম’ এবং ‘বাড়ি’-র সঙ্গে।
ভাষায় বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা কী?
বিভক্তি শব্দকে পদে রূপান্তরিত করে, বাক্যে ব্যবহৃত পদগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের মধ্যে একটা পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করে এবং পদের বাইরের রূপের পরিবর্তন ঘটায়।
দুটি পরাধীন রূপমূলের উদাহরণ দাও।
দুটি পরাধীন রূপমূলের উদাহরণ হল- ‘মানুষকে’ – এই পদে ‘কে’ এবং ‘ফুলওয়ালা’ -এই পদে ‘ওয়ালা’।
দুইয়ের বেশি বৃরূপমূলের সমবায়কে কী বলা হয়?
দুইয়ের বেশি রূপমূলের সমবায়কে জটিল রূপমূল বলা হয়। যেমন- জাতীয়তাবাদ, অসহযোগিতা ইত্যাদি।
জোড়কলম শব্দ’ কাকে বলে?
জোড়কলম শব্দ বা পোর্টম্যানটু হল এমন এক রূপমূল যা দিয়ে একাধিক রূপ-বাক্যতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বোঝানো হয়। সহজ কথায় এই রূপ হল একাধিক রূপমূলের সমবায়। যেমন-ধোঁয়া আর কুয়াশা মিলে হয় ‘ধোঁয়াশা’।
ফাঁকা রূপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ব্যাকরণে এক ধরনের রূপের উল্লেখ পাওয়া যায় যাদের কোনো অর্থ নেই বা বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই, এদের বলে ফাঁকা রূপ। যেমন- ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী।
শূন্যরূপ কাকে বলে?
এক ধরনের রূপ আছে সেগুলোকে চোখে দেখা না গেলেও তার অস্তিত্ব বোঝা যায়। এদের বলে শূন্যরূপ। যেমন- শূন্য বিভক্তি।
শূন্যরূপের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দাও।
শূন্যরূপের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল শূন্য বিভক্তি। আমি বাড়িতে যাব বোঝাতে আমি বাড়ি যাব লিখলেও চলে। এখানে বাড়ি শব্দের ‘তে’ বিভক্তি হল শূন্য রূপ।
পদদ্বৈত কাকে বলে?
একই পদ পাশাপাশি দু-বার বসার প্রক্রিয়াকে পদদ্বৈত বলে। যেমন- সকাল সকাল বা চুপিচুপি। একই পদের পাশাপাশি অবস্থান ছাড়াও সমার্থক এবং বিপরীত পদ যোগে পদদ্বৈত হতে পারে। যেমন- ভাবনাচিন্তা, ভালোমন্দ ইত্যাদি।
অনুকার পদ কাকে বলে একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করো।
যে দ্বিপদী শব্দ বা পদের একটি অর্থযুক্ত এবং অপরটি তার ধ্বনিগত অনুকরণে সৃষ্ট আপাত অর্থহীন, সেই দ্বিপদী শব্দ বা পদকে বলে অনুকার পদ। যেমন-টুপ-টাপ, জল-টল।
সংক্ষেপিত পদ বা ক্লিপিংস কী?
ক্লিপিংস এমন এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে শব্দের চেহারায় পরিবর্তন ঘটে শব্দটি আকারে ছোটো হয়ে যায় কিন্তু শব্দের অর্থগত বা ব্যাকরণগত কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন- বড়োদাদা > বড়দা।
বিকল্পন বা সাপ্লিশন কী?
মুণ্ডমাল শব্দ কাকে বলে?
একটি শব্দগুচ্ছের প্রত্যেকটি শব্দের শুধুমাত্র প্রথম ধ্বনি সহযোগে যখন একটি শব্দ তৈরি হয়, তখন তাকে বলে অ্যাক্রোনিম বা মুণ্ডমাল শব্দ। বাংলায় এ জাতীয় শব্দের ব্যবহার কম হলেও ইংরেজিতে এর প্রচুর উদাহরণ দেখা যায়। যেমন-VIP (Very Important Person), DM (District Magistrate) ইত্যাদি।
নব্য শব্দ প্রয়োগপ্রক্রিয়া কী?
নতুন কোনো শব্দ যখন দৈনন্দিন ভাষা ব্যবহারের তালিকায় প্রবেশ করে তখন সেই প্রক্রিয়ার নাম নব্য শব্দ প্রয়োগ। যেমন-বর্তমানে আমাদের শব্দভাণ্ডারে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, সেলফি এই শব্দগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বর্গান্তর কাকে বলে?
যখন কোনো শব্দ এক পদ থেকে অন্য পদে পরিবর্তিত হয় কিন্তু চেহারার কোনো পরিবর্তন ঘটায় না, তখন তাকে বলে বর্গান্তর। ‘রামবাবু একজন ধনী মানুষ’-এই বাক্যে ‘ধনী’ শব্দটি বিশেষণ। কিন্তু যখন বলা হয়-‘ধনী মাত্রেই অহংকারী নয়’, তখন ‘ধনী’ শব্দটি বিশেষ্য পদ।
ক্র্যানবেরি রূপমূল কী?
ক্যানবেরি রূপমূল হল এমন এক ধরনের পরাধীন রূপমূল যার কোনো আভিধানিক অর্থ নেই এবং কোনো ব্যাকরণসম্মত অর্থও নেই। অথচ এরা একটি শব্দকে অন্য শব্দ থেকে পৃথক করতে পারে। যেমন-আলাপ, বিলাপ, প্রলাপ ইত্যাদি শব্দগুলির ‘লাপ’ অংশটি।