তাওবাদ কী – আজকের পর্বে তাওবাদ কী তা আলোচনা করা হল।
তাওবাদ কী
তাওবাদ কী |
প্রাচীন চিনে কনফুসিয়াসবাদের সমসাময়িককালে অপর যে মতাদর্শ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল তা হল তাওবাদ। এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রচারক ছিলেন লাওৎ-জু। লাওৎ-জু খ্রি. পূ. ষষ্ঠ শতকে চিনে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না।
লাওৎ-জু-এর লেখা গ্রন্থ
লাওৎ-জু মৃত্যুর পূর্বে ‘তাই-তে- চিং’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটি পরবর্তীকালে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। গ্রন্থটি প্রথম বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
রাষ্ট্রীয় আদর্শ
তাওবাদ ছিল এমন এক প্রতিবাদী দর্শন যেখানে শাসকের স্বৈরাচারী নীতির বিরোধিতা করা হয়। তাওবাদ মনে করত যে, অস্ত্রের আস্ফালন বাড়ালে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়বে, আইন বাড়ালে চোর-ডাকাত বাড়বে। অন্যদিকে প্রশাসনে রাজার হস্তক্ষেপ যত কম হবে, প্রজাদের তত মঙ্গল হবে।
তাও দর্শন
‘তাও’ শব্দের অর্থ হল মার্গ বা পথ বা পন্থা। তাওবাদী দর্শনের মূলকথা হল প্রকৃতির মধ্যে পথের অনুসন্ধান করা। এই মতবাদে বিশ্বাস করা হয় যে, প্রকৃতিই হল জ্ঞানের মূল উৎস। তাওবাদ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের কথা বলে।
প্রকৃতির গুরুত্ব
তাওবাদ প্রকৃতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়, যেখানে কনফুসিয়াসবাদ নৈতিকতাকে গুরুত্ব দেয়। তাওবাদীরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে কোনোকিছু করার বিরোধী ছিলেন। তাঁদের মতে, প্রকৃতির নিয়মে সবকিছু চলবে।
শান্তি
তাওবাদী দর্শন ছিল রহস্যবাদী। তাওবাদী দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শান্তি। দণ্ড ও সংঘাতকে বর্জন করে জীবনে শান্তি বজায় রাখা তাওবাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তারা নীরব স্বাধীনতার মাধ্যমে অনন্ত শান্তির সন্ধান করেছিলেন।
উপসংহার
তাওবাদী দর্শন সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। পরবর্তীকালে চ্যাংলিয়াং-এর নেতৃত্বে তাওবাদ একটি ধর্ম-সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। চিন সম্রাট ৪২৩ খ্রিস্টাব্দে এই ধর্মের প্রধানকে ‘তিয়েন-সি’ বা প্রধান গুরু উপাধিতে ভূষিত করেন। বর্তমান চিনে দেড় হাজারেরও বেশি ‘কুয়ান’ বা তাওবাদী মন্দির রয়েছে।