নিখিল ভাবছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে, এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।”—নিখিলের বন্ধু অভুক্ত মানুষকে কীভাবে বাঁচাতে চায়? বন্ধুর এই সমাজসেবার বিপক্ষে নিখিল কী যুক্তি দেখিয়েছিল? |
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ -গল্পে মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার সময় ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুদৃশ্য দেখে। ওই দৃশ্য দেখার পর থেকেই মৃত্যুঞ্জয় অস্থির হয়ে ওঠে-কীভাবে নিঃস্বার্থ দানে অভুক্ত মানুষগুলোর কল্যাণ করা যায় এই ভাবনায়। সহকর্মী নিখিলের হাতে সে সমস্ত মাইনের টাকা তুলে দিয়ে কোনো রিলিফ ফান্ডে দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। নিখিল সংসারের সদস্যদের কথা স্মরণ করিয়ে নিষেধ করলেও শোনে না। শুধু তাই নয়, সে নিজের একবেলার খাবার না খেয়ে বিলিয়ে দিতে থাকে। তার দেখাদেখি স্ত্রীও তার একবেলার ভাত বিলিয়ে দিতে থাকে। এভাবে নিজে কৃচ্ছসাধন করে আর পরিবারের দায়িত্ব একরকম উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয় দেশের লোককে বাঁচানোর নেশায় মেতে উঠল।
নিখিল সহকর্মীর এই সমাজসেবার নেশা মোটেই সমর্থন করল না। নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে বোঝাতে চেষ্টা করল-“এভাবে দেশের লোককে বাঁচান যায় না।” সারা দেশময় চোখের আড়ালে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, আর মৃত্যুঞ্জয় যা করছে তা কেবল চোখের সামনে যারা মরছে তাদের বাঁচানোর সান্ত্বনা। নিখিল মনে করত ভূরিভোজটা অন্যায় কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন তা গ্রহণ করা অন্যায় তো নয়, বরং উচিত। আর মৃত্যুঞ্জয় যেভাবে নিজেকে না খাইয়ে মারতে বসেছে তা দশজনকে খুন করার চাইতে বড়ো অপরাধ। নিখিল মনে করে অভুক্তদের খাদ্য ত্রাণ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং তাদের স্বার্থপরতার শিক্ষা দিতে পারলে সমস্যা মিটত। নিজের বেঁচে থাকার ব্যাপারে যদি তারা স্বার্থপর হত তাহলে কেউ মরত না। যে-কোনো বাধা টপকে তারা ঠিক খাবার জোগাড় করে আনত।