“সেদিন আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখল-অনাহারে মৃত্যু।”-এই ‘দেখা’-র ফলে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল? |
মৃত্যুঞ্জয় অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ, যে-কোনো মানসিক আঘাতেই সে কাহিল হয়ে পড়ে। এমনকি তার মনের প্রভাব এসে পড়ে শরীরের উপর। অফিসে আসার সময় অভুক্ত মানুষের মৃত্যু দৃশ্য দেখে তার মানসিক আঘাত ক্রমেই মাত্রা পেল এবং সে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করল। অফিসে পৌঁছে সে তার নিজের কুঠরিতে ধপ করে চেয়ারের উপর বসে পড়ল। কিন্তু তার শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা কিছুমাত্র কমল না বরং বেড়ে চলল। একটু বসেই সে গেল কলঘরে এবং দরজা বন্ধ করে বমি করতে শুরু করল। বাড়ি থেকে খেয়ে আসা ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি, মাছ, দই-সবই উঠে আসল বমির সঙ্গে।
মৃত্যুঞ্জয় কলঘর থেকে ফিরে কাচের গ্লাসে জলপান করে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে না পেরে শূন্য দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল উদাস ভাবে। তার সহকর্মী নিখিলের প্রশ্নের উত্তরে আনমনে সে বলে উঠল-“মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল!”
নিখিল তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারল মৃত্যুঞ্জয়ের মনে এইসব প্রশ্ন উকি মারছে-না খেয়ে মরা কী ও কেমন? কত কষ্ট হয়? ক্ষুধার যন্ত্রণা বেশি না মৃত্যুর? প্রভৃতি। মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার জানাল এই ভেবে যে ফুটপাথে লোক মরছে না খেয়ে অথচ সে চারবেলা পেটপুরে খেয়েছে বলে কিংবা রিলিফ কাজ ভালোভাবে চলছে না অথচ সে ভেবে পায় না কীভাবে সময় কাটাবে।