মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ গল্পটি ছোটোগল্প হিসেবে কতখানি সার্থক
কেবল আয়তনের বিচারে ছোটো হলেই কোনো গল্পকে ছোটোগল্প বলা যায় না, আরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ গল্পে ছোটোগল্পের যে বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে তা হল-
তাৎক্ষণিকভাবে শুরু ও সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু
ভাত গল্প যে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু তাতে মূল কাহিনি সম্পর্কে প্রথমেই ধারণা করা যায় না। কিন্তু গল্পের কাহিনি সংক্ষিপ্ত, উচ্ছব নাইয়ার ভাতের জন্য বাসনা নিয়ে শুরু, আর ঘটনার বিস্তৃতি মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
একমুখীন ও শাখাপ্রশাখাহীন
গল্পের শুরুতে উচ্ছবের ভাতের প্রতি আকাঙ্ক্ষা, বারেবারে ভাত খাবার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং ভাতের আশায় শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়া। এই কাহিনির সঙ্গে বড়োবাড়ির কিছু ঘটনা এসেছে উচ্ছবের ভাত খাওয়াকে কেন্দ্র করে। তাকে কখনোই শাখা কাহিনি বলা যাবে না বরং একমুখীন কাহিনি দ্রুত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
স্বল্প সংখ্যক চরিত্র
গল্পের পার্শ্ব চরিত্রের সংখ্যা কম নয়, কিন্তু তারা কেউই মূল চরিত্রের সমান গুরুত্ব পায় না বরং তারা গল্পের পরিণতি লাভে সাহায্য করে। তাই এ গল্পের মূল চরিত্র একটিই।
চরম মুহূর্ত বা Climax
বেশ কয়েকবার উচ্ছব ভাত পাবে বলে ভাবে কিন্তু উৎকণ্ঠা ক্রমশ চরমে যখন পৌঁছোয় তখন তার হকের ভাত রাস্তায় ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন উচ্ছবের ভাতের ডেকচি নিয়ে পালানোর ঘটনায় গল্পের চরম মুহূর্ত (Climax) সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত মুঠো মুঠো ভাত খাওয়ার মধ্য দিয়ে সেই পরিস্থিতির নিরসন হয়।
লেখিকার দৃষ্টিভঙ্গি
যারা রোদে বৃষ্টিতে কষ্ট করে ধান ফলায় তারাই ভাতের জন্য হাপিত্যেশ করে। এই নির্মম সত্যটি লেখিকা তুলে ধরেছেন চমৎকারভাবে।
চমক
সার্থক ছোটোগল্পের শেষে পাঠকবর্গের জন্য একটি চমক অপেক্ষা করে। ভাতের জন্য কাঙাল উচ্ছব অশুচি ভাত নিয়েই যখন দৌড়ে পালায় এবং সেইসূত্রে পেতলের ডেকচি চুরির অপরাধে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন পাঠকবর্গ ঘটনার অভিঘাতে স্তব্ধ হয়ে যায়।
সুতরাং, মহাশ্বেতা দেবীর গল্প ‘ভাত’ ছোটোগল্পের বেশিরভাগ বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ একটি সার্থক ছোটোগল্প।
আরও পড়ুন – যন্ত্র-সভ্যতা-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ