“বাদায় থাকে অথচ ভাতের আহিংকে এতখানি।” -‘আহিংকে’ শব্দের প্রকৃত অর্থ কী? কার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে? ভাতের প্রতি তার কীরূপ আহিংকের প্রকাশ গল্পে ঘটেছে? |
মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র উচ্ছব (উৎসব) নাইয়া সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে।
‘বড়োই মন্দ’ কপাল উচ্ছবের। যে বাদা অঞ্চলে সে থাকত সেখানে ভাতের অভাবে গেঁড়ি-গুগলি, সুসনো-হিঞ্চে শাক দিয়ে পেট ভরাত। শুধু তাই নয়, যেদিন রাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে মাতলা নদী এগিয়ে এসে তার ঘর-পরিবার ভাসিয়ে দিল, সেদিন সন্ধ্যায় উচ্ছব অনেকদিন পর পেটভরে খেয়েছিল হিঞ্চে সেদ্ধ আর এত গুগলি সেদ্দ নুন আর লঙ্কা পোড়া দিয়ে, ভাত জোটেনি। অর্থাৎ নিরন্ন উচ্ছবের ভাতের প্রতি আকাঙ্ক্ষা অনেক দিনের, ভাতের খিদে তার অনেক পুরোনো। তার উপর সে-বছর ধানের মড়ক শুরু হওয়ায় উচ্ছবের মতো মানুষদের কান্না ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বছরের কয়েকটা মাস অন্তত আধপেটা সিকিপেটা ভাত পাওয়া যেত, সেই সম্ভাবনাও নষ্ট হয়। এরপর সেই প্রলয়ংকরী রাতে উচ্ছব সর্বস্ব হারায়। বউ-ছেলে-মেয়েকে হারিয়ে উচ্ছব পাগলের মতো হয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতিতে ধার্য ত্রাণের খাবার তার চোখেও পড়ে না। সে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে নিজের পরিবারকে খুঁজে গেছে-“অ চন্নুনীর মা। চন্নুনীরে! তোমরা রা কাড়ো না ক্যান- কোতা অইলে গো!” যখন তার চেতনা ফেরে তখন আর ত্রাণের খিচুড়ি নেই। ড্রাইডোলের শুকনো চালই চিবিয়ে খায় এবং জল খায়। এইভাবে পেটে তিল তিল করে জমতে থাকা ভাতের খিদে নিয়ে সে হাজির হয় বাসিনীর মনিব বাড়িতে। সেখানে ভাতের ছড়াছড়ি, নিত্য পাঁচ রকম চালের ভাত রান্না হয়। ভাতের গন্ধে উতলা হয়ে সে হোমের কাঠ কাটতে থাকে ভাত খেতে পাওয়ার আশায়। ঘটনাচক্রে সেই ভাত অশুচি হয়ে পড়ে বাড়ির বুড়ো কর্তা মারা যাওয়ায়। কিন্তু ভাতের বাসনায় উচ্ছব হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। বাসিনীর অনুরোধ উপেক্ষা করে সে সেই অশুচি ভাত নিয়েই দৌড় লাগায় স্টেশনের দিকে। সেখানে সে মুঠো মুঠো ভাত খেয়ে, কখনও ভাতের মধ্যে মুখ গুঁজে ভাতের ‘আহিংকে’ মেটায়।