বাংলা গানের ইতিহাসে মান্না দে-র অবদান আলোচনা করো
বাংলা গানের ইতিহাসে মান্না দে-র অবদান আলোচনা করো। |
বাংলা গানের ইতিহাসে মান্না দে নামে খ্যাত এই বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীর প্রকৃত নাম ছিল প্রবোধচন্দ্র দে। তাঁর শৈশবে সংগীত শিক্ষায় হাতেখড়ি হয় কাকা সংগীতাচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দের কাছে। পরে তিনি ওস্তাদ দবীর খাঁর কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। এ ছাড়া ওস্তাদ আমন আলি খান, ওস্তাদ আবদুল রহমান খানের মতো সংগীত গুরুদের ছত্রছায়ায় তাঁর সাংগীতিক প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে।
পরবর্তী সময়ে তিনি চলচ্চিত্রে নেপথ্য সংগীত শিল্পী হিসেবে গান গাওয়ার সুযোগ পান। তিনি প্রথম নেপথ্য শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘তামান্না’ ছবিতে সুরাইয়ার সঙ্গে ‘জাগো, আয়ি উষা’ গানটি গাওয়ার মাধ্যমে। সর্বমোট ১২৫০টির মতো গান তাঁর কণ্ঠে গীত হয়, যার মধ্যে ৬১১টি চলচ্চিত্রের গান ও ৩৬৫টি আধুনিক গান ছিল। বাংলা ও হিন্দি ভাষায় তিনি যেমন গান গেয়েছেন তেমনি ভোজপুরী, পাঞ্জাবি, অসমিয়া, ওড়িয়া, গুজরাটি, মালয়ালম্-এর মতো নানান ভাষায় গান গাওয়ায় তাঁর শৈল্পিক দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।
তিনি বেশকিছু রবীন্দ্রসংগীত, শ্যামাসংগীত ও দ্বিজেন্দ্রগীতিসহ আরও কত ধরনের যে গান গেয়েছেন তার কোনো সীমা নেই। ‘গণদেবতা’, ‘দেবদাস’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘মৌচাক’, ‘ছদ্মবেশী’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে গান গেয়ে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎকে তিনি যেমন সম্পৃক্ত করেছেন তেমনি দর্শকচিত্তে নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যেতেও সক্ষম হয়েছেন।
সংগীত শিল্পে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময় বহুবিধ পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ভারত সরকার প্রদত্ত ‘পদ্মশ্রী‘ (১৯৭১), ‘পদ্মভূষণ’ (২০০৫) এবং ‘দাদাসাহেব ফালকে’ (২০০৭) পুরস্কার লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ‘বঙ্গবিভূষণ’ (২০১১) পুরস্কারেও সম্মানিত হন। তাঁর কণ্ঠে গীত অসংখ্য গান আজও বাঙালির প্রাণের সম্পদ। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হল-‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’, ‘সব খেলার সেরা, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, ‘আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না,’ ‘আমি যে জলসাঘরে’, ‘কাহারবা নয় দাদরা বাজাও’ প্রভৃতি।