আধুনিক বাংলা গানের ধারায় সলিল চৌধুরীর সংগীতসাধনার পরিচয় দাও। |
সলিল চৌধুরী (১৯২৩-১৯৯৫) বাংলা তথা ভারতীয় সংগীত জগতে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তিনি আসলে সংগীত পরিচালক তবে একজন কবি ও চিত্রনাট্যকার রূপে ভারতের সংগীত ঘরানায় তিনি বিশেষ স্থানলাভ করেছেন। তিনি ছিলেন গণসংগীতের অন্যতম স্রষ্টা রূপে এক নতুন ধারার প্রবর্তক। বাংলা, হিন্দি, মালয়ালম্ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তিনি সংগীত পরিচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সার্থকনামা হয়ে উঠেছেন। গণনাট্য সংঘের সদস্য সলিল চৌধুরী যে বিখ্যাত গণসংগীতগুলির জন্ম দিয়েছেন-‘বিচারপতি’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘রানার’ প্রভৃতি, চিরকালের সম্পদ। তিনি নানা নাটকে গান রচনা করে, সুর দিয়ে গ্রামে গ্রামে আপামর জনসাধারণের মধ্যে সংগীতের প্রসার ঘটান। জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘পরিবর্তন’ (১৯৪৯), এবং শেষ ছবি ‘মহাভারতী’ (১৯৯৪)সহ তিনি মোট ৪০টি ছবিতে কাজ করেছেন। হিন্দি চলচ্চিত্র ‘দো বিঘা জমিন’-এ তিনি সংগীত পরিচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
বাংলা-হিন্দি ছাড়া মালয়ালম্ চলচ্চিত্রেও সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সর্বোপরি, তিনি প্রায় ৭৫টির মতো হিন্দি, ৪০টি বাংলা ও ২৬টি মালয়ালম্ ছবিসহ ভারতীয় অন্যান্য ভাষায় নির্মিত অনেক ছবিতে সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ‘মধুমতি’ চলচ্চিত্রের জন্য ‘ফিল্মফেয়ার’ সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার এবং ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার কর্তৃক ‘সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি’ সম্মানে বিভূষিত হন। পাশ্চাত্য সংগীতের ব্যবহারে তাঁর উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনিই প্রথম ‘কয়্যার’ সংগীতের প্রবর্তন করেন। সলিল চৌধুরীর গণসংগীতগুলি প্রাক্-স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে গণ আন্দোলনের সৃষ্টি করে।