বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলপ্রসাদ সেন অথবা রজনীকান্ত সেনের অবদান আলোচনা করো

বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলপ্রসাদ সেন অথবা রজনীকান্ত সেনের অবদান আলোচনা করো
বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলপ্রসাদ সেন অথবা রজনীকান্ত সেনের অবদান আলোচনা করো।
ভারতীয় ক্লাসিক সংগীতের তীর্থভূমি লখনউ শহরে বাংলা গানের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটান অতুলপ্রসাদ সেন (১৮৭১- ১৯৩৪)। একাধারে বাংলাদেশে রাগপ্রধান গানের স্রষ্টা ও হিন্দুস্থানি রাগরাগিণীর তরঙ্গ সঞ্চারকারী অতুলপ্রসাদ সেন তিনটি সংগীত বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। যথা- ‘কাকলি’, ‘কয়েকটি গান’ ও ‘গীতগুঞ্জ’। তাঁর গানের সুরে যেমন মনোরম আনন্দদায়ক মৌলিকতার আস্বাদ লাভ করা যায়, তেমনি তার ঔজ্জ্বল্য ও চিত্তগ্রাহীতার দিকটিও ছিল অপূর্ব।

বাংলা গানের সঙ্গে ঠুংরি গানের এক অন্তর্লীন সম্পর্ক স্থাপনে অতুলপ্রসাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তাই তাঁর ঠুংরির সুরে ও ছন্দে হিন্দুস্থানি রাগরাগিণীর স্বতঃস্ফূর্ত সংযোগ লক্ষণীয়। এমনকি মুসলিম চালের আমেজ সৃষ্টিতেও তিনি বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সেজন্য তাঁর ঠুংরির গানে এক মধুর স্পর্শ অনুভূত হয়। অতুলপ্রসাদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঠুংরি গানের দৃষ্টান্ত হল-‘কে আবার বাজায় বাঁশী এ ভাঙা কুঞ্জবনে’, ‘একা মোর গানের তরী ভাসিয়েছিলেম নয়ন জলে’, ‘কে তুমি বসি নদীকূলে একল।’ এ ছাড়া তিনি বেশকিছু টপ্পা গানও রচনা করেন। যেমন-‘কে যেন আমারে বারেবারে চায়’, ‘তবু তোমারে ডাকি বারেবারে’। বাংলা ভাষায় গজল. রচনার পথিকৃৎ রূপে তাঁকেই চিহ্নিত করা হয়। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গজল গান হল- ‘কত গান তো হলো হাওয়া’, ‘কে গো তুমি বিরহিণী’ প্রভৃতি।

কবি অতুলপ্রসাদের গানে খেয়াল ভঙ্গিমার প্রকাশও লক্ষ করা যায়। তাঁর রচিত কয়েকটি কোরাস গান বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর কয়েকটি স্বদেশপ্রেমমূলক কোরাস গান হল- ‘বল বল বল সবে শত বীণা বেণু রবে…’, ‘হও ধরমেতে ধীর, হও করমেতে বীর/হও উন্নত শির নাই ভয়’। অতুলপ্রসাদ একজন গীতিকার, সুরকার ও গায়ক রূপে এক অভিনব সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, যা নিঃসন্দেহে এক অবিস্মরণীয় প্রতিভার দৃষ্টান্ত।

Leave a Comment