বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের (১৮৬৩-১৯১৩) আবির্ভাব ঘটে রবীন্দ্র সমকালে। তিনি তাঁর পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সংগীত ঘরানায় বর্ধিত হন। পারিবারিক সূত্রে সুকণ্ঠ, সংগীতজ্ঞ ও অন্যতম খেয়াল গায়ক পিতার সান্নিধ্য লাভ করে দ্বিজেন্দ্রলাল বিশিষ্ট নাট্যকার, গীতিকার ও সুরকার রূপে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও তাঁর গানের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন যে, গানগুলি পাঠে পাঠক মাত্রেরই হৃদয়ে ভাবের উদ্বেগ ও সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়। দ্বিজেন্দ্রলালের বহু নাটকে গানের ব্যবহার লক্ষণীয়। যেমন-

“অতুল চিরমোহন তুমি সুন্দর সুরধাম।”
-(নূরজাহান)

দ্বিজেন্দ্রলালের নাটক রচনায় ব্যক্তিপ্রেম স্বদেশপ্রেমে এবং স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমে উন্নীত হয়েছে আর তার আধার হল গান। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘হাসির গান’ এবং পরে আরও কয়েকটি সংগীত সংকলন গ্রন্থ-‘প্রেমের গান’, ‘ভক্তির গান’ ও ‘স্বদেশ মন্ত্রের গান’ প্রকাশিত হয়। দ্বিজেন্দ্রলালের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্বদেশি গানের দৃষ্টান্ত হল-

(ক) “বঙ্গ আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার, আমার দেশ।”
(খ) “ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা।”

ভারতীয় ক্লাসিকাল সংগীতের সুরের পাশাপাশি ইংরেজি গানের সুর সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। বিদেশে থাকাকালীন তিনি আইরিশ ও স্কচ গান গ্রন্থনা করেছেন। তাঁর সুযোগ্য পুত্র সংগীতকার, সুরকার দিলীপকুমার রায়ের স্মৃতিচারণায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সংগীত প্রতিভার একটি বিশিষ্ট দিক উদ্‌ঘাটিত হয়- “দ্বিজেন্দ্রলালই প্রথম আমাদের সংগীতের মধ্যে বৈদেশিকী ওজোশক্তির সমন্বয়ে এক অপূর্ব রসের সৃষ্টি করেছিলেন।” তাঁর গানে শব্দপ্রয়োগ, শব্দের ঐশ্বর্য, সৌন্দর্য, মাধুর্য, ছন্দ বৈচিত্র্য, অলংকারের ঝংকার এক অভিনব মাত্রা লাভ করে যা শিল্পসার্থকতার শীর্ষদেশ স্পর্শ করতে সফল হয়।

Leave a Comment