সাহিত্যে প্রতীক বা সংকেতের ব্যবহার একটি প্রচলিত রীতি। প্রতীকময়তার মধ্য দিয়ে সাহিত্যিক তাঁর বক্তব্য বিষয়কে প্রকাশ করেন বৃহত্তর ব্যঞ্জনায়। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বনফুল, প্রেমেন্দ্র মিত্র, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সকলেই প্রতীকের ইঙ্গিতময়তাকে তাঁদের রচনায় নানাভাবে কাজে লাগিয়েছেন। সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজও তার ব্যতিক্রম নন। তাঁর ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটিতেও বিষয়ের গুরুত্ব পাঠকের অন্তরে পৌঁছে যায় প্রতীকের ইঙ্গিতময়তার হাত ধরেই।
গল্পের শুরুতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে এক জীর্ণ বৃদ্ধাকে দেখা যায়। গল্পের ক্রমাগ্রসরে বোঝা যায় এই নামগোত্রহীন অতিবৃদ্ধা চরিত্রটিই লেখকের মূল হাতিয়ার।
দৃশ্যত জীর্ণ নুব্ধ বৃদ্ধা মারা গেছে ভেবে তার সৎকারের – দাবি নিয়ে যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার উপক্রম হয় তখন জীর্ণ বৃদ্ধা চরিত্রটি ধীরে ধীরে অপসারিত হয়ে আমাদের মননে জায়গা করে নেয় জীর্ণ ভারতবর্ষ। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় জর্জরিত ভারতবর্ষ। পাঠক বুঝতে পারে উক্ত বৃদ্ধা এখানে ভারতবর্ষের প্রতীকী উপস্থাপন। দেশের জীর্ণ দশা, তার অস্তিত্বের সংকট নিয়ে কেউ ভাবিত নয়, সকলে তাদের নিজস্ব দাবিটুকু নিয়ে লড়াইয়ে মত্ত। হিন্দু-মুসলিম বিরোধের প্রেক্ষিতে এই প্রতীকি উপস্থাপন তাই গুরুত্বপূর্ণ। “আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”-বৃদ্ধার এই প্রশ্ন সমস্ত ভারতবাসীর কাছে।
যে ধর্মীয় বিরোধকে ভিত্তি করে একদা ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল আজও তার অবসান ঘটেনি। দেশের আনাচে-কানাচে আজও ধর্মীয় বিদ্বেষরূপ বারুদে মাঝে মাঝে অগ্নিসংযোগ হতে দেখা যায়। এই ধর্মীয় বিরোধের অর্থহীনতা পাঠকবর্গের শুভবোধের কাছে পৌঁছে দিতে লেখক সচেষ্ট হয়েছেন প্রতীকময়তার মধ্য দিয়ে।