সেখানেই গড়ে উঠেছে একটা ছোট্ট-বাজার- বাজারটির পরিচয় দাও
“সেখানেই গড়ে উঠেছে একটা ছোট্ট-বাজার।”- নির্দেশিত বাজারটির পরিচয় দাও। |
আধুনিক কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর গ্রামীণ পটভূমিকায় লেখা ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের সূচনায় একটি গ্রামীণ বাজারের বর্ণনা দিয়েছেন। স্থানীয় মানুষজন তাদের দৈনন্দিন জীবনের দোলাচলতা, তাপ-উত্তাপ নিয়ে জড়ো হয় সেই বাজারে।
গ্রামের পাশে পিচের রাস্তা বাঁক নেওয়ার মুখে বাজারটি গড়ে উঠেছে। সেখানে বিদ্যুৎ রয়েছে (যদিও গ্রামে বিদ্যুৎ নেই)। কিছু নির্দিষ্ট স্থায়ী দোকান সেখানে রয়েছে। তিনটি চায়ের দোকান, দুটি সন্দেশের দোকান, তিনটি পোশাকের দোকান, একটি মনোহারীর দোকান এবং দুটি মুদিখানা। সেই সঙ্গে বাজারে রয়েছে একটি আড়ত ও একটি হাস্কিং মেশিন যেখানে ধান, গম ইত্যাদি ভাঙানো হয়। এর পিছনে আছে একটি ইটভাটা। এই হল বাজারটির আপাত পরিধি।
এই ছোট্ট বাজারটিতেই লেখকের ভাষায়-“সবাই চলে আসে সভ্যতার ছোট্ট উনোনের পাশে হাত-পা সেঁকে নিতে।” চায়ের দোকানটিকে ঘিরে মজলিশ বসে যায়। চা-পানের সঙ্গে চলতে থাকে আড্ডা। আলোচনা তখন বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যায়। রাজনীতি, সিনেমা থেকে শুরু করে বর্তমান কোনো টাটকা খবর সবই আলোচিত হত। রাত্রি ন-টা পর্যন্ত বাজার জমজমাট থাকত। তারপর সব ফাঁকা, পিচের রাস্তার উপর কখনও নেড়িকুত্তার ছায়া পড়ে, কখনও গর্জন করে বেরিয়ে যায় ছুটন্ত ট্রাক।
আসলে গল্পে বর্ণিত বাজারটি শুধু গ্রামীণ মানুষগুলির দৈনন্দিন জিনিসপত্রের চাহিদা মেটাত না, সেই সঙ্গে তাদের মানসিক খোরাকের জোগান দিত। নতুন খবর, নতুন বিষয় একে অপরের সঙ্গে আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে তারা দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি দূর করত। লেখক সম্ভবত স্থানীয় মানুষগুলির মানসিকতার হালকা আভাস দেওয়ার জন্যই বাজারটির অবতারণা করেছেন।
আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য আলোচনা করো