সার্ভে পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা | অনুষঙ্গ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা

সার্ভে পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা | অনুষঙ্গ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা

সার্ভে পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা
সার্ভে পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা

সার্ভে বা সমীক্ষা পদ্ধতি [Survey]

একটি সমীক্ষা বা সার্ভে হল একটি গবেষণা পদ্ধতি, যা মনোবিজ্ঞানে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রচুর সংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সমীক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয় হল ব্যক্তির চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, আচরণ বা অভিজ্ঞান বিষয়ে মানসম্মত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা।

সমীক্ষা বিভিন্ন মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে। যেমন- কাগজ এবং পেনসিল প্রশ্নাবলি,  অনলাইন সমীক্ষা,  টেলিফোন সাক্ষাৎ করা,  প্রত্যক্ষ বা মুখোমুখি সাক্ষাৎ করে।

সার্ভে বা সমীক্ষা পদ্ধতির ধাপ

সার্ভে বা সমীক্ষা পদ্ধতির সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বা স্টেজ হল-

  1. সমীক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
  2. সমীক্ষার ডিজাইন বা নকশা তৈরি করতে হবে।
  3. সমীক্ষার পদ্ধতি নির্বাচন করতে হবে।
  4. সমীক্ষার জন্য প্রশ্ন নির্বাচন করতে হবে এবং প্রশ্নগুচ্ছ তৈরি করতে হবে।
  5. পাইলট টেস্ট করে পরে সমীক্ষার জন্য বিতরণ করতে হবে।
  6. প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হবে।
  7. প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে।

সার্ভে বা সমীক্ষা পদ্ধতির সুবিধা

সার্ভে বা সমীক্ষা পদ্ধতির সুবিধাগুলি হল-

(1) ব্যক্তিগত এবং পরিসংখ্যানগত তথ্যসংগ্রহ: 

সার্ভে পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত ও পরিসংখ্যাগত উভয় প্রকার তথ্যই সংগ্রহ করা যায়।

(2) গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা: 

সার্ভের মাধ্যমে শুধু মনোবিদ্যাতে নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনৈতিক গবেষণা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সার্ভের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

(3) বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনার সাথে পরিচিতি: 

সার্ভে পদ্ধতি নতুন ধারণাগুলির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

(4) কম সময়ে অধিক সংখ্যক নমুনার সাথে সংযোগ: 

প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে বর্তমানে অতি অল্প সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের অভিমত বা প্রতিক্রিয়া সার্ভে পদ্ধতি মাধ্যমে পাওয়া যায়।

(5) বিশ্লেষণ ও প্রতিফলনের সুবিধা: 

সার্ভে পদ্ধতির সহায়তায় একই সাথে কোনো একটি বিষয়ের ওপরে মানুষের প্রতিফলন এবং ট্রেন্ড যাচাই করা যায়।

(6) বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়ক: 

সার্ভে পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যাসমাধান হয়, যেমন- [i) সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার বিষয়, [ii] গ্রাহক ও চাহিদার বিষয়ে সম্পর্ক, [iii] বিক্রয় ও মাকের্টিং পরিস্থিতির সম্পর্ক, [iv] প্রোডাক্ট ও পরিসেবার উন্নতি সম্পর্ক।

সার্ভে বা সমীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা

সার্ভে বা সমীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা হল-

(1) পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিক্রিয়া:

সমীক্ষাগুলি প্রতিক্রিয়ার পক্ষপাতের জন্য সংবেদনশীল। যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সামাজিকভাবে পছন্দসই প্রতিক্রিয়া, বিস্মৃতিজনিত সমস্যার কারণে ভুল তথ্য বা প্রশ্নের শব্দের প্রভাবের কারণে তির্যক প্রতিক্রিয়া প্রদান করতে পারে।

(2) সীমিত গভীরতা: 

সাক্ষাৎকার বা ফোকাস গ্রুপের মতো গুণগত পদ্ধতির তুলনায় সমীক্ষাগুলিতে জটিল ঘটনা, প্রেরণা বা প্রতিক্রিয়াগুলির পেছনে অন্তর্নিহিত কারণগুলি বোঝার গভীরতার অভাব থাকতে পারে।

(3) স্যাম্পলিং সমস্যা: 

সমীক্ষার ফলাফলগুলি নমুনার প্রতিনিধিত্বের উপর নির্ভর করে এবং নমুনা সংগ্রহের সময় পক্ষপাতিত্ব করলে, এমন ফলাফল হতে পারে যা বৃহত্তর জনসংখ্যার জন্য সাধারণীকরণযোগ্য নয়।

(4) প্রশ্নে ব্যবহৃত শব্দের প্রভাব: 

সমীক্ষার প্রশ্নগুলির শব্দচয়ন অংশগ্রহণকারীদের প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। যার ফলে পক্ষপাতিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গির ভুল ব্যাখ্যা বা প্রশ্নের উদ্দেশ্য বোঝার ক্ষেত্রে স্পষ্টতার অভাব দেখা দিতে পারে।

(5) কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষমতা: 

কিছু কিছু সমীক্ষা কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না বা ভেরিয়েবলের মধ্যে সম্পর্কের দিক নির্ধারণ করতে পারে না। কারণ তারা কেবল একক সময়ে কিছু তথ্য পরিবেশন করে।

অনুষঙ্গ বা পারস্পরিক সম্পর্ক [Correlation]

মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যে-সকল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল অনুষঙ্গ বা পারস্পরিক সম্পর্ক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে পারস্পরিক সম্পর্ক নামেও অভিহিত করা হয়। অনুষঙ্গ বা কোরিলেশন বলতে কোনো কার্যকারণ সম্পর্ককে বোঝায় না এবং এটি সহজভাবে দেখায় যে, ঠিক কীভাবে ভেরিয়েবল একে-অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অনুষঙ্গ হল দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক।

অনুষঙ্গ একটি পরিসংখ্যানগত পরিমাপ হল, যা দুই বা তার বেশি ভেরিয়েবলের মধ্যে সম্পর্ক বা অ্যাসোসিয়েশন মূল্যায়ন করে। এটি নির্দেশ করে যে, একটি ভেরিয়েবলের পরিবর্তন অন্য ভেরিয়েবলের পরিবর্তনের সাথে কতটা যুক্ত।

অনুষঙ্গের প্রকারভেদ

অনুষঙ্গ প্রধানত তিন প্রকারের হয়, যথা-

(1) ইতিবাচক অনুষঙ্গ:

যখন একটি চলক বা ভেরিয়েবলের বৃদ্ধি অন্য ভেরিয়েবলের বৃদ্ধির সাথে যুক্ত হয় এবং একটি চলক বা ভেরিয়েবলের হ্রাস অন্য ভেরিয়েবলের হ্রাসের সাথে যুক্ত হয়, তা-ই হল ইতিবাচক অনুষঙ্গ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন শিক্ষার্থী যত বেশি সময় পড়াশোনার সাথে যুক্ত থাকবে, পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বরও তত বেশি হবে। এখানে বেশি সময় পড়াশোনার সাথে পরীক্ষায় নম্বরও বাড়তে থাকে।

(2) নেতিবাচক অনুষঙ্গ: 

যখন একটি চলক বা ভেরিয়েবল বাড়লে অন্য চলক বা ভেরিয়েবল কমে অর্থাৎ বিপরীত অবস্থা দেখা দেয়, তাকে নেতিবাচক অনুষঙ্গ বলে। যেমন, পরিবেশের উন্নতা যত বেশি বাড়তে থাকবে শীতের জামাকাপড়ের বিক্রিও তত কম হবে।

(3) শূন্য অনুষঙ্গ: 

শূন্য অনুষঙ্গ চলক বা ভেরিয়েবলের মধ্যে কোনো পদ্ধতিগত সম্পর্ককে নির্দেশ করে না। এক্ষেত্রে একটি ভেরিয়েবলের পরিবর্তন অন্য-একটি ভেরিয়েবলের পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেয় না। শূন্য অনুষঙ্গের একটি উদাহরণ হল-একটি মানুষের জুতোর আকৃতির সাথে মেধার সম্পর্ক।

অনুষঙ্গ পদ্ধতির গুণাবলি

অনুষঙ্গ পদ্ধতি গুণাবলি হল-

(1) সম্পর্ক চিহ্নিত বা শনাক্তকরণে সহায়ক: 

অনুষঙ্গ বিশ্লেষণ ভেরিয়েবলের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত করতে বা শনাক্ত করতে এবং পরিমাপ করতে সাহায্য করে। এটি গবেষকদের বুঝতে সাহায্য করে কীভাবে একটি ভেরিয়েবলের পরিবর্তন অন্য ভেরিয়েবলের পরিবর্তনের সাথে যুক্ত।

(2) অন্তর্দৃষ্টি প্রদানে সহায়ক: 

এটি সম্ভাব্য ফলাফলের মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে এবং অন্য ভেরিয়েবলের মানের ওপর ভিত্তি করে একটি ভেরিয়েবলের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে অনুষঙ্গ সহগ ব্যবহার করা যেতে পারে।

(3) শক্তির পরিমাপ প্রদান: 

অনুষঙ্গ বা পারস্পরিক সম্পর্ক সহগগুলি সম্পর্কের শক্তি এবং দিককে পরিমাপ করে এবং ভেরিয়েবলের মধ্যে সংযোগের মাত্রার একটি সংখ্যাসূচক পরিমাপ প্রদান করে।

(4) হাইপোথিসিস টেস্টিং: 

পর্যবেক্ষিত অনুষঙ্গগুলি তথা পারস্পরিক সম্পর্কগুলি পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কি না তা নির্ধারণ করে পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ, অনুমান, পরীক্ষাকে সমর্থন করে। পাশাপাশি গবেষকদের তাদের তথ্য থেকে অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করে।

অনুষঙ্গ পদ্ধতির ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা

অনুষঙ্গ পদ্ধতির ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতাগুলি হল-

(1) কারণ ভ্রান্তি: 

অনুষঙ্গ বা পারস্পরিক সম্পর্ক কার্যকারণকে বোঝায় না। ভেরিয়েবলের মধ্যে অনুষঙ্গ স্থাপন করা প্রমাণ করে না যে, একটি ভেরিয়েবল অন্য চলকের পরিবর্তন ঘটায়। বরং তা অন্যান্য কারণ বা বিভ্রান্তিকর ভেরিয়েবল ক্রিয়া হতে পারে।

(2) দিকনির্দেশের অস্পষ্টতা: 

অনুষঙ্গ বিশ্লেষণ কার্যকারণের দিক নির্ধারণ করতে পারে। কোন্ ভেরিয়েবল অন্য ভেরিয়েবলকে প্রভাবিত করে তা স্পষ্টভাবে বোঝা না গেলেও ভেরিয়েবলের অনুষঙ্গ করা সম্ভব।

(3) অশুদ্ধ সম্পর্ক: 

অনুষঙ্গ বা পারস্পরিক সম্পর্কগুলি তৃতীয় ভেরিয়েবল বা বিভ্রান্তিকর কারণগুলির দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যা বিশ্লেষণে বিবেচনা করা হয় না এবং যা মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর পারস্পরিক সম্পর্কের দিকে পরিচালিত করে।

(4) রৈখিক অনুমান: 

অনুষঙ্গ বা পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ ভেরিয়েবলের মধ্যে একটি রৈখিক সম্পর্ক অনুমান করে। অরৈখিক সম্পর্ক থাকতে পারে কিন্তু তারা ঐতিহ্যগত অনুষঙ্গ সহগ দ্বারা ধরা হয় না।

(5) নমুনা আকারের প্রভাব: 

অনুষঙ্গ বা পারস্পরিক সম্পর্ক সহগগুলি নমুনার আকার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। ছোটো নমুনাগুলি স্বাভাবিকভাবে কম নির্ভরযোগ্য বা স্থিতিশীল পারস্পরিক সম্পর্ক অনুমান প্রদান করে।

Read More – As You Like It MCQ

Leave a Comment