আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা
আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

ভূমিকা : ‘আগুন’ নাটকের নামকরণ প্রসঙ্গ আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই একটি বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন, সেটা হল নাট্যকার এই নাটক উপস্থাপন করার পূর্বে যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন তা-ই পাঠককুলের কাছে অকপটে তুলে ধরেছেন। তিনি যা প্রত্যক্ষ করেছেন তা হল-সাম্রাজ্যবাদী শাসক, আড়তদার ও কালোবাজারিরা কীভাবে ব্যাবসায়িক স্বার্থ আর নির্লজ্জ রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে ‘ম্যানমেড’ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে। তাদের কৃত্রিম এই মহামন্বন্তরের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে দরিদ্র মধ্যবিত্তদের।

নামের পর্যালোচনা: ‘আগুন’ নাটকের আগুন প্রত্যক্ষ নয়, অর্থাৎ আগুনের দাহ্য রূপ এখানে বাহির থেকে দৃশ্যমান নয়; কিন্তু আমরা সূক্ষ্মভাবে নাটকটিকে যদি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব ‘আগুন’ নামকরণটি ব্যঞ্জনার্থক। পুরো নাটকে ‘আগুন’ শব্দটি মাত্র দু-বার ব্যবহার করা হয়েছে।

নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে বস্তিবাসী কারখানার শ্রমিক সতীশের কণ্ঠে একবার ধ্বনিত হয়- “এখন সকালবেলাই তো আবার পেটে আগুন লেগে গেছে।” প্রসঙ্গ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সতীশ গতরাত্রে এক মিস্ত্রির কাছ থেকে প’ দেড়েক চাল কর্জ করেছিল। পরিবারের তিনজন ওই চাল গতরাত্রেই খায়। ফলে সকালে খাওয়ার মতো কোনো খাবার ছিল না। কিন্তু পেট তো আর সেসব বোঝে না। তাই ক্ষুধার্ত সতীশ সকালবেলা কারখানায় কাজে যাওয়ার সময় উপরোক্ত উক্তিটি করে বসে।

পঞ্চম দৃশ্যে নাট্যকার দ্বিতীয়বার যুবকের কণ্ঠে ‘আগুন’ শব্দের পুনরাবৃত্তি করেছেন। চালের লাইনে যখন সিভিক গার্ড ও ৪র্থ পুরুষ হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে তখন তাদের গণ্ডগোল থেকে অব্যাহতির জন্য বা ভয় দেখানোর জন্য যুবক ‘আগুন’ শব্দটি ব্যবহার করে। আবার, পরক্ষণে দেখা যায়, নাটকের ১ম পুরুষ যখন প্রশ্ন করে- “কোথায় আগুন?”, সিভিক গার্ড বলে-“আগুন! আগুন কিসের!” হরেকৃষ্ণ যখন বলে উঠল-“আগুন আবার লাগল কোথায় বাবা এর মধ্যে।” তখন যুবক বলে- “(হাতজোড় করে) আগুন! আগুন জ্বলছে আমাদের পেটে।” অর্থাৎ, না খেতে পেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক খিদের জ্বালায় পেটে আগুন জ্বলছে বলে আর্তনাদ করে ওঠে।

সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, নাট্যকার এই নাটকে যে আগুনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন তার দাহ্য ক্ষমতা বাহ্যিক আগুনের দাহ্য ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং পরাক্রমশালী। বাহ্যিক আগুন কেবলমাত্র দৃশ্যমান বস্তুকেই দাহ্য করে ক্ষান্ত হয়ে যায় কিন্তু মানুষের অন্তরাত্মার দাহ্যিক আগুন শুধু দৃশ্যগ্রাহ্য বস্তুকেই দহন করে না, অদৃশ্য অনেক বস্তুকেও পুড়িয়ে ছারখার করার ক্ষমতা রাখে।

মানবদরদি বিজন ভট্টাচার্যের শিল্পীসত্তা নির্মাণ করে পরাজিত- নিপীড়িত-অসহায় মানুষের আকাল থেকে উত্তরণের পথ। এই পথ প্রতিবাদের পথ, প্রতিরোধের পথ। তাই বলা যায়, চল্লিশের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের স্ফুলিঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে এই ‘আগুন’। তাই নামের বিচারে এর যাথার্থ্য যাচাইয়ের অবকাশ রাখে না।

আরও পড়ুন- ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment