“বিশেষত, তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই” -আলোচ্য উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখক কোন্ সত্যকে তুলে ধরেছেন?
আলোচ্য অংশটি ছোটোগল্পের জনক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে। ফটিক চরিত্রটির মধ্য দিয়ে লেখক এই গল্পে বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যাগুলিকে তুলে ধরেছেন। বাস্তবিক তেরো-চোদ্দো বছরের বয়ঃসন্ধিকালকে বলা হয় ঝড়-ঝঞ্ঝার কাল। ফটিকের বয়সি ছেলেদের মতো বালাই পৃথিবীতে আর নেই। এদের না থাকে শোভা, না থাকে কর্মদক্ষতা। এরা স্নেহের উদ্রেক করতে পারে না, আবার এদের সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নয়।
তাদের মুখের আধো-আধো কথা ন্যাকামি, পাকা কথা জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই বাচালতা মনে হয়। হঠাৎ কাপড়চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করে বেমানানরূপে বেড়ে ওঠে। লোকে সেটাকে তার একটা কুশ্রী স্পর্ধারূপে গণ্য করে। তার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা হঠাৎ অদৃশ্য হয়। লোকে তাই তাকে মনে মনে দোষারোপ করে। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাফ করা যায়, অথচ এই বয়সের কোনো স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্য বলে মনে হয়।
মামার সঙ্গে কলকাতায় আসার পর ফটিক তার মামির কাছে, মামাতো ভাইদের কাছে, এমনকি বিদ্যালয়ের অন্যান্য সঙ্গীদের কাছেও অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত হয়। এই অবজ্ঞা ও অবহেলা শুধুমাত্র ফটিকের নিজের কর্মদোষে নয়, তার নবকৈশোরের অনিবার্য পরিণাম হিসাবে লেখক এখানে দেখাতে চেয়েছেন। ফটিক যে বয়সে মাতৃগৃহ ত্যাগ করে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক জগতে প্রবেশ করেছে, সেই বয়সে প্রকৃতিগত কারণেই চলে নানা দ্বিধাদ্বন্দু। বয়ঃসন্ধির এই সময়পর্বে পারিপার্শ্বিক সমস্ত জগৎকে নিজের বিরুদ্ধাচারী বলে মনে হয়। তেরো-চোদ্দো বছরের অন্যান্য বালকদের মতো ফটিকও এই সময়ে কীভাবে পৃথিবীর এক বালাই বা বিপদে পরিণত হয়েছিল-সেই সত্যই লেখক এখানে তুলে ধরেছেন।
আরও পড়ুন –একাদশ শ্রেণির বাংলা বিষয়ের ১ম সেমিস্টারের অন্যান্য অধ্যায়