নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
ভূমিকা
নাগরিক কথার অর্থ নগরের অধিবাসী। কিন্তু বর্তমানে এই শব্দটির পারিভাষিক বিশেষ অর্থ আছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে যাদের অংশ গ্রহণের অধিকার আছে তাদের বলা হয় নাগরিক। নাগরিক অধিকার বা পৌর অধিকার প্রত্যেক সভ্য দেশের নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। আমরা সভ্য মানুষ। রাষ্ট্রের প্রতি যেমন আনুগত্য স্বীকার করা আমাদের কর্তব্য তেমনি রাষ্ট্র ও আমাদের নানা ধরণের সুযোগ দেয় নিরুদ্বেগ জীবনযাপন ও আত্মবিকাশের জন্য। সেই অধিকার হল পৌর অধিকার। রাষ্ট্র আমাদের দিয়েছে জীবনরক্ষার অধিকার, সম্পত্তি ভোগদখল, সংস্কৃতি ও ভাষা সংরক্ষণের অধিকার, ধর্মাচরণের অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, স্বাধীনভাবে কর্ম সম্পাদনের অধিকার, শিক্ষার অধিকার প্রভৃতি। এছাড়া স্বাধীন দেশে ভোটাধিকার, কর্মের অধিকার সংবিধানে নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত আছে। যে রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য বেশি অধিকার স্বীকার করে সেই রাষ্ট্রকে তত অধিক প্রগতিশীল বলে আমরা মনে করি।
নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব
অধিকার ও দায়িত্ব পরস্পর অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত-অধিকার ভোগ করতে হলে কর্তব্য পালন করতেই হবে। যেমন রাস্তায় নিরাপদে হেঁটে যাওয়ার অধিকারর আমাদের যদি থাকে তাহলে অপরের হাঁটতে যাতে অসুবিধা না হয় তাই তাদের সুবিধার জন্য পথ ছেড়ে দেওয়াও আমাদের কর্তব্য বা দায়িত্ব। রাষ্ট্র আমাদের মত প্রকাশের বা বাকস্বাধীনতা দিয়েছে। আমরা এমন আচরণ করব না যাতে অপরের বাক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়। ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির যেমন কর্তব্য রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি ও নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে। রাষ্ট্র স্বীকৃত আইন মেনে চলা আমাদের দায়িত্ব সহকারে পালন করতে হয়।
রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য
প্রত্যেক সুনাগরিক হবে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল। সংবিধানে যে মৌলিক অধিকার নাগরিককে দিয়েছে তার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা আমাদের কর্তব্য। গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিক স্ব-ইচ্ছায় গড়ে তুলেছে রাষ্ট্র। তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এই পদ্ধতিকে বলা হয় সামাজিক চুক্তি। চুক্তির মাধ্যমে জনগণ বা নাগরিক রাষ্ট্রের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করেছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব ক্ষমতার অপপ্রয়োগ না করা। নাগরিকের কর্তব্য রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা।
তবে নাগরিকের অধিকার রয়েছে রাষ্ট্র যদি জনস্বার্থের বিরোধী কাজ করে তাহলে বিধিসম্মত ভাবে বাধা দিয়ে সংশোধিত করার চেষ্টা করা। ভোটদানের অধিকার আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকের বিশেষ অধিকার। নাগরিকের কর্তব্য বিচার বিবেচনা করে বাঞ্ছিত অধিকারকে নির্বাচন কালে তারা যেন ব্যবহার করে। এই অধিকার প্রয়োগ করতে হবে সতর্ক ভাবে যাতে অনুপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচিত না হয়। সুশাসন কার্য পরিচালনা করতে পারে, সুযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হলে।
রাষ্ট্র সুপরিচালনা
নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হল জনসেবা, সমাজসেবা, দেশসেবা, রাষ্ট্রসেবা এসব হল নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের দেশ বিদেশি শাসকের শৃঙ্খল ছিন্ন করে অজস্র মানুষের প্রাণের বিনিময়ে, ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে। রাষ্ট্রকে উন্নত করা, রাষ্ট্রের কল্যানের দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের ওপর বর্তায়। ব্রিটিশ রাজত্বে স্বাধীনতা পদে পদে ক্ষুন্ন হয়েছে। নাগরিক অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। রাষ্ট্র পরিচালনার ভার এখন ভারতবাসীর ওপর। তাই রাষ্ট্রকে সুপরিচালিত করার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় আমাদের গ্রহণ করতে হয়। আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে রাষ্ট্র প্রদত্ত মৌলিক অধিকার প্রত্যেক মানুষ ভোগ করতে পারে। নিজের অধিকার ও স্বাধীনতাকে যেমন অক্ষুন্ন রাখব তেমনি অপরের অধিকার ও স্বাধীনতা যাতে বিঘ্নিত না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সুনাগরিকের মহান আদর্শ
প্রত্যেক ভারতবাসীকে সুনাগরিকের মহান আদর্শের পথে চলতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন বিচারবুদ্ধির স্ফূরণ, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব দমন, অজ্ঞতা-উদ্যমহীনতা দলাদলি বর্জন করে আত্মবিকাশের সহায়ক শিক্ষা অর্জন করা। নাগরিকের শিক্ষা, অন্ধ-কুসংস্কার বর্জিত বিচারবুদ্ধি যদি সদা জাগ্রত হয় তাহলে সুনিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র পরিচালনা সহজ হয়।
গণতন্ত্র ও রাজনীতি
রাজনৈতিক দল ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয়না – যে একথা সত্যি, কিন্তু সংকীর্ণ দলাদলি অনেক সময় গণতন্ত্রের বিপদ ডেকে আনে। নাগরিকের কর্তব্য স্বার্থপরতাও দলগত সংকীর্ণতা পরিহার করা। আবার দেশপ্রেম যেন উগ্ররূপ ধারণ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের না ক্ষতি করে তাও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। বিশ্বায়ন ঘটে গেছে। বিশ্বের শান্তি নির্ভর করে আমরা যদি নিজেদের বিশ্বসমাজের অধিবাসী মনে করি। তাই জাতীয়তাবোধকে আন্তর্জাতিকতার দিকে পরিচালিত করতে হবে।
উপসংহার
প্রায় দুশ বছরের পরাধীনতা। ভারতকে শ্মশানের ধবংসস্তূপে পরিণত করেছে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অবিশ্বাস, দুঃখ-দারিদ্র, বেকারত্বের গভীরে ভারতবাসী আজ নিমজ্জমান। এই ভয়াবহ প্রতিকুল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ভারতের সকল নাগরিকের সংগ্রাম করতে পারবে ভারতকে শ্রেষ্ঠত্বে উন্নীত। তাই প্রত্যেককে সুনাগরিকের আদর্শ অনুসরণ করা একান্ত কর্তব্য। এসব করলে ভারত আবার শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে পৃথিবীতে। এখানে হতাশার কোনো স্থান নাই। ভারত এগিয়ে চলেছে সবদিক থেকে। ভারতের প্রযুক্তিতে তেরী মহাকাশ যান ২০১৩ সালে পাড়ি দিয়েছে মঙ্গলগ্রহের পথে সফলতার সাথে।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা