জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা রচনা
জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা রচনা
ভূমিকা
পূর্ব-দিগন্তে ভোরের আলোধারা ‘দিনের শুরু’ ঘোষোণার আগেই সমস্ত বিশ্বের খবর নিয়ে দুয়ারে করাঘাত করে সংবাদপত্র। সংবাদপত্র জাগ্রত বিশ্বের বাণীরূপ। সুদূর বিশ্বকে ঘরের প্রাঙ্গনে এনে গৃহবদ্ধ মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বমানবতা ও বিশ্ব-নাগরিকত্বেরর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অবতীর্ণ করে। বর্তমান সভ্যতার অপরিহার্য তাই সংবাদপত্র।
সংবাদপত্র ও জনমত
গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী সংবাদপত্র। সে গণআদালতের বিচার শালায় ন্যায়-অন্যায়ের সাক্ষী রূপে হাজির হয়, সমর্থন করে ন্যায় দন্ড হয়ে দাঁড়িয়ে নিপীড়িতের পক্ষে। সংবাদপত্র ন্যায়ের পূজারি, অন্যায়ের প্রতিবাদী-কণ্ঠ। গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ সংবাদপত্র। গণতন্ত্রের অবমাননা দেখলে গর্জে ওঠে সংবাদপত্রের নির্ভীক কন্ঠ।
সংবাদপত্রের ভূমিকা সহস্রধারায় প্রবাহিত
শুধু সংবাদ পরিবেশন নয়-সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, কৃষ্টি, খেলা প্রভৃতি জীবন-বিশ্ব তথা সমগ্র মহাজগতে তার অবাধ বিচরণ। সংবাদপত্রই কোন দুঃসবাদ বা সুখবর পৌঁছে দিতে পারে সংবাদ প্রাপকের কাছে, সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে গণতন্ত্রের বুনিয়াদ স্থায়ী করতে সাহায্য করে। গিরি-কান্তার, দুস্তর মরু মহাসাগরের দুর্গম বাধা তুচ্ছ করে সঠিক খবর সংগ্রহ করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুকঠিন দায়িত্ব পালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সে। সংবাদপত্রই পারে একনায়কত্বের দন্ত চূর্ণ করতে, মানুষের মুখের ভাষা, বুকের আশাকে বিশ্ব-দরবারে পৌঁছে দিতে।
যেখানে প্রতিকারহীন বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে সেখানে মানবতার প্রতিমূর্তি হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদী কন্ঠ রূপে হয় তার আত্মপ্রকাশ, ধবনিত হয় অকুতোভয় ধিক্কার ধবনি। তাই সংবাদপত্র বিশ্বের এক দুর্গম শক্তি। সংবাদপত্রের আহ্বানে পৃথিবীর লক্ষ-কোটি মূক কণ্ঠস্বরও সোচ্চার হতে পারে, শুরু হতে পারে নবজাগরণ। বিশ্বের শক্তিমদমত্ত অত্যাচারীর দল ও হার মানতে বাধ্য হয় যখন সংবাদপত্রের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে গণবিক্ষোভ সংগঠিত হয়, পরাজিত হয় প্রবল স্বৈরতন্ত্র, জয় হয় বিশ্বমানবতার, গণতন্ত্রের।
সংবাদপত্রের ব্যাপ্তি
বর্তমানের যে কোন সভ্যতা সংবাদপত্রের সহায়তা ছাড়া সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারেনা। মুষ্টিমেয় কয়েকটি কুসংস্কার ও ধর্মান্ধ পন্থী আদিম গোষ্ঠী ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্রই সংবাদপত্রের অবাধ বিচরণ। ভারতবর্ষে প্রায় ছাবিবশ হাজারও বাংলাভাষায় প্রায় দু’হাজার পত্র-পত্রিকা সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে।
গণপার্লামেন্ট সংবাদপত্র
যে কোন সরকারের জনস্বার্থে গৃহীত পরিকল্পনার সাফল্য ও ব্যর্থতার চিত্র গণদরবারে পৌঁছে দেয় সংবাদপত্রের বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল মাধ্যম। চিঠিপত্র বিভাগে জনগণকর্তৃক প্রেরিত চিঠি প্রকাশের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ও প্রকাশের ব্যবস্থা করে। স্বৈরাচারী সরকারকে গণআদালতের বিচারশালার কাঠগড়ায় দাঁড়করানোর দৃষ্টান্ত তো প্রায়ই ঘটে থাকে। তাই সংবাদপত্রকে বলা হয় গণপার্লামেন্ট (Peoples Parliament) ।
উপসংহার
সংবাদপত্র গণতন্ত্রের বিশেষ স্তম্ভ। তাই যখন কোন সংবাদপত্র তার নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন থেকে সরে গিয়ে কায়েমী স্বার্থের কাছে ক্রীড়নকে পরিণত হয় তখন মানুষের ভাগ্যাকাশে ঘনিয়ে আসে দুর্ভাগ্যের কালো মেঘ। স্বার্থান্বেষী, ধনবান, শক্তিমানের হাতে কখনও কখনও সংবাদপত্রের কন্ঠরোদ করার প্রচেষ্টা হয়ে থাকতে বাস্তবে দেখা যায়, এ ছাড়া চিত্তবিনোদন, সাহিত্য-সংস্কৃতি, খেলাধূলা প্রভৃতি বিভাগ নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সুস্থ সমাজ গড়তে ও মানসিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে ও জনমত গড়তে সংবাদপত্রের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান যুগে।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা