টীকা লেখো মেটারনি ব্যবস্থা

টীকা লেখো: মেটারনি ব্যবস্থা
টীকা লেখো: মেটারনি ব্যবস্থা।

ভূমিকা

অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলার প্রিন্স মেটারনিখ ফরাসি বিপ্লব প্রসূত ভাবধারাগুলিকে দমন করে প্রাক্-বিপ্লবী অবস্থা ফিরিয়ে আনতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তাকেই মেটারনিখ ব্যবস্থা বলা হয়।

উদ্দেশ্য

ফরাসি বিপ্লব প্রসূত প্রগতিশীল ভাবনাগুলিকে (উদারতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ) ধ্বংস করে। ② ইউরোপের রাজনীতিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ রাখা; ৩ ভিয়েনা চুক্তির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা করা ⑧ শক্তি সমবায়কে ফরাসি বিপ্লব প্রসূত ভাবধারাগুলিকে দমন করতে কাজে লাগানো। ৫ নিজেকে ইউরোপের রাজনীতিতে এক ছত্রপতি করে তোলা। ৬ ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের বিরোধিতা করা। ডেভিড টমসনের মতে, মেটারনিখ ব্যবস্থা হল অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার এক ‘মাস্টার প্ল্যান’।

মেটারনিখ ব্যবস্থা

মেটারনি ব্যবস্থার বিভিন্ন দিকগুলি হল

রক্ষণশীলতা: মেটারনি ছিলেন রক্ষণশীল দলের প্রধান পুরোহিত তাই ফরাসি বিপ্লব প্রসূত ভাবধারা অর্থাৎ উদারতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদের তিনি তীব্র বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে পুরাতনতন্ত্রই হল সম্পদ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রকৃত ভিত্তি। এজন্য তিনি প্রায় ফরাসি বিপ্লবযুগের বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র, যাজকতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, গির্জাতন্ত্রের পুনস্থাপনের জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

দমননীতি: নির্বিচার দমননীতি অনুসরণ করে অস্ট্রিয়ার জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপকে কঠোর হস্তে দমন করেন। পাশাপাশি ইতালি ও জার্মানির জাতীয়তাবাদকে দমন করতেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

বিভাজন ও শাসন নীতি: অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যের জাতিগত ও অন্যান্য সুযোগ গ্রহণ করে তিনি বিভাজন ও শাসন নীতি প্রয়োগ করেন।

বিপ্লব প্রসূত ভাবধারার প্রতি অবজ্ঞা : অষ্টাদশ শতকের চিন্তাধারা মেটারনিঙ্কে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে যে, তিনি ঊনবিংশ শতকের চিন্তাধারাকে কোনো আমল দেন নি। ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী। ন্যায্য অধিকার সিংহাসনে রাজার স্বর্গীয় অধিকারতত্ত্বকে মেটারনি অভ্রান্ত বলে ঘোষণা করেন। শাসকের প্রতি প্রজা আনুগত্য জানাতে বাধ্য বলে তিনি মনে করতেন। এককথায় মেটারনি বিপ্লব প্রসূত ভাবধারাগুলিকে অবজ্ঞা করার তিনি সকলপ্রকার চেষ্টা করেন।

বিপ্লবী আন্দোলন দমন: ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মেটারনিখ ব্যবস্থা ইউরোপে আন্তর্জাতিক পুলিশের কাজ করে। মেটারনিখ ইউরোপে বিপ্লবের সম্ভাবনা দূর করার জন্য ইউরোপীয় শক্তি সমবায়ের সাহায্য নেন। দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে বিপ্লবী আন্দোলন দমন করার জন্য সামরিক সাহায্য প্রেরণ করেছিলেন।

সাফল্য

১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মেটারনিখ্ পদ্ধতি যে ইউরোপে সাফল্য লাভ করেছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। মেটারনিখ পদ্ধতির সাফল্যের কারণগুলি ছিল। (১) দীর্ঘকাল ব্যাপী যুদ্ধে ইউরোপ অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল এবং মেটারনি পদ্ধতি ইউরোপ থেকে যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর করেছিল। (২) ইউরোপে প্রায় চল্লিশ বছর শান্তিরক্ষার চেষ্টা করে মেটারনিখ যুগের দাবিকে পূরণ করেছিলেন এবং এই সঙ্গে ইউরোপের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি ঘটে। (৩) বহুজাতি অধ্যুষিত অস্ট্রিয়ার সংহতি রক্ষিত হয়েছিল।

উপসংহার

সামগ্রিক আলোচনা থেকে এটাই বলা যায় মেটারনিখ ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপের উদারপন্থী ভাবধারাকে রুদ্ধ করে রাখেন। তিনি ইউরোপের বিভিন্ন রাজাদের পরামর্শ দিতেন ‘শাসন করুন-সংস্কার নয়।’

Leave a Comment