ভিয়েনা সম্মেলনের ক্ষতিপূরণ নীতি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো – আজকের পর্বে ভিয়েনা সম্মেলনের ক্ষতিপূরণ নীতি সম্পর্কে একটি টীকা লেখা হল।
ভিয়েনা সম্মেলনের ক্ষতিপূরণ নীতি সম্পর্কে একটি টীকা
ভিয়েনা সম্মেলনের ক্ষতিপূরণ নীতি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো। |
ভূমিকা
নেপোলিয়নের পতনের পর আহূত ভিয়েনা সম্মেলনে (১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) বিজয়ী চতুঃশক্তি অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, রাশিয়া ও ইংল্যান্ড নিজেদের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে এবং ইউরোপের শক্তিসাম্যের দিকে লক্ষ রেখে তিনটি নীতির অনুসরণ করেছিল, যথা-১ ন্যায্য অধিকার, ২ ক্ষতিপূরণ, ৩ শক্তিসাম্য (Balance of Power) নীতি।
ক্ষতিপূরণ নীতির উদ্দেশ্য
নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ইউরোপের যে-সমস্ত দেশগুলি বিশেষত বিজেতা রাষ্ট্রগুলির (ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, সুইডেন) যে-সমস্ত আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তার ক্ষতিপূরণ দান করতেই ভিয়েনা সম্মেলনে ক্ষতিপূরণের নীতি গৃহীত হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ নীতির দুটি দিক ছিল- (১) ফ্রান্স এর কাজ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৯০ কোটি ফ্রাঙ্ক আদায় করা হয়। (২) নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে ইউরোপের বহুদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই সমস্ত দেশগুলি যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ইউরোপ ও ইউরোপের বাইরের ভূখণ্ড নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।
ক্ষতিপূরণ নীতির প্রয়োগ
এই নীতি অনুসরণ করে বিজেতা রাষ্ট্রগুলি জয়ের পুরস্কারস্বরূপ, ন্যায্য অধিকারের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে কোনো কোনো স্থান দখল করে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল, যেমন-
ইংল্যান্ডকে ক্ষতিপূরণ দান: ইংল্যান্ড, সিংহল, দক্ষিণ আফ্রিকা, হ্যালিগোল্যান্ড, মাল্টা, আইওনিয় দ্বীপপুঞ্জ এবং স্পেন ও ফ্রান্সের কয়েকটি বন্দরের ওপর অধিকার পেল।
রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ দান: রাশিয়া পেল ওয়ারশ, ফিনল্যান্ড, বেসারাবিয়া ইত্যাদি।
প্রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ দান: প্রাশিয়াকে দেওয়া স্যাক্সনির উত্তরাংশ, ডানজিগ, রাইন প্রদেশসমূহ, পোমেরেনিয়া।
সুইডেনকে ক্ষতিপূরণ দান: সুইডেন থেকে রাশিয়াকে ফিনল্যান্ড ও প্রাশিয়াকে পশ্চিম-পোমেরেনিয়া দেওয়ার বিনিময়ে সুইডেন পেল নরওয়ে।
অস্ট্রিয়াকে ক্ষতিপূরণ দান: জার্মানির ৩৯টি ছোটো ছোটো স্বাধীন রাজ্য নিয়ে “কনফেডারেশন অফ দি রাইন” গঠন করা হয় এবং অস্ট্রিয়ার ওপর এই কনফেডারেশনের শাসনকাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। উত্তর ইটালির ওপর অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মূল্যায়ন
ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত ক্ষতিপূরণ নীতি সমভাবে প্রয়োগ করা হয়নি এবং ২ ইটালি ও জার্মানির জাতীয় ঐক্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা হয়। পক্ষান্তরে এই ক্ষতিপূরণ নীতির মাধ্যমেই ইউরোপের রাজনীতিতে রাশিয়ার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারের পথ সুগম হল।