বলকান সমস্যার কারণগুলি বর্ণনা করো – আজকের পর্বে বলকান সমস্যার কারণগুলি বর্ণনা করা হল।
বলকান সমস্যার কারণগুলি বর্ণনা করো
বলকান সমস্যার কারণগুলি বর্ণনা করো। |
ভূমিকা
ইউরোপের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা জটিল সমস্যা ছিল বলকান সমস্যা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের পূর্ব অংশে অবস্থিত বলকান অঞ্চলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় সেই সমস্যা পূর্বাঞ্চল সমস্যা বা বলকান সমস্যা নামে পরিচিত। কতকগুলি কারণকে কেন্দ্র করে বলকান সমস্যাটি জটিল হয়ে ওঠে। যেমন-
তুরস্কের অবক্ষয়
ইউরোপের পর্বতবেষ্টিত অঞ্চলটি অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে তুর্কি সুলতানের দুর্বলতার ফলে বলকান অঞ্চলের রুমানিয়ান, সার্ব, গ্রিক, ক্রোট ইত্যাদি জাতি জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়। এই সুযোগে বহিশত্রুদের আগমন ঘটে। তুরস্ক এই অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিশত্রু জনিত আক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলে তুরস্কের অবক্ষয় শুরু হয়।
বলকান জাতীয়তাবাদ
তুরস্কের অধিকারে থাকা বলকান অঞ্চলে বসবাসকারী গ্রিক, রুমানিয়ান, সার্ব, আলবেনিয়ান, বুলগেরিয়ান, মিশরীয় প্রভৃতি জাতিদের ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, বিপরীত হওয়ার ফলে তাদের সংস্কৃতিও ছিল ভিন্ন। বিস্তর প্রভেদ থাকার ফলে ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীকালে জাতীয়তাবোধের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শ্বেতবর্ণের মানুষেরা তুরস্কের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে চায়।
রাশিয়ার অগ্রগতি
তুর্কি সাম্রাজ্যের ভাঙনের সুযোগে রাশিয়া বলকান অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এবং তুরস্কের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে সেখানকার বেশ কিছু স্থান নিজের অধিকারে আনতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া কৃষ্ণসাগরের উপকূল পর্যন্ত রাশিয়া নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। এমনকি বলকান অঞ্চলের খ্রিস্টান প্রজাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ফলে রুশ-তুরস্ক সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
রাশিয়ার অগ্রগতির বিরুদ্ধে বিরোধীপক্ষ
বলকান উপদ্বীপের ওপর রাশিয়ার এই আধিপত্য ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ও অস্ট্রিয়ার মনঃপুত হয়নি। বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার অবাধ অগ্রগতির ফলে নিজেদের স্বার্থ বিপন্ন হতে পারে এই আশঙ্কায় তারা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। পাশাপাশি তুর্কি সাম্রাজ্যকে অখণ্ড রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে থাকে। ফলে বলকান উপদ্বীপের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে।