বাংলার বর্ষা প্রবন্ধ রচনা

বাংলার বর্ষা  প্রবন্ধ রচনা

বাংলার বর্ষা

ভূমিকা : 

গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতি যখন দগ্ধ, প্রাণীজগৎ ও উদ্ভিদজগৎ যখন তৃষাকাতর বুকে অস্থির হয়ে ওঠে, তখনই নব জলধারার শুভ বার্তা নিয়ে আসে ‘ঘন গৌরবে নবযৌবনা” বর্ষা। কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘বর্ষামঙ্গল’ উদ্যাপনের মন্ত্র। ধূলিধূসর পিঙ্গল ঘনকৃষ্ণ মেঘের সমারোহে আকাশে ‘ঘন ঘন দেয়া চমকায়।’ তারপর নেমে আসে ঝরঝর ধারা। নবযৌবনা বর্ষার আহ্বানে মিলনের আশ্বাসে, বিরহতাপিত হৃদয়ে সান্ত্বনা দিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে মানুষ। এ যেন অজানা কোন্ দেশে ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’।

বর্ষায় গ্রামবাংলার চিত্র : 

গ্রামবাংলার প্রকৃতি নিসর্গ সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। গাছ-গাছালিতে ভরা উদ্যানে ছোটো ছোটো কুটির। আম জাম বট অশ্বত্থের নিস্তব্ধ উপস্থিতি; সবুজে শ্যামলে ভরা প্রান্তর। কোথাও রয়েছে এ সবের মাঝে বেগবতী চিরযৌবনা স্রোতস্বিনী। বর্ষার জলধারায় সিক্ত হয়ে চারদিক সবুজ শ্যামলিমায় আবৃত হয়ে ওঠে। গ্রামবাংলার বুকে বর্ষার ছোঁয়া যেন প্রাণের পরশ। “হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচেরে”। “কুলায় কাঁপিছে কাতর কপোত; দাদুরী ডাকিছে সঘনে/গুরুগুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গগনে।” রবিঠাকুরের এ কথা কল্পনা নয়, বাস্তব। বর্ষায় গ্রামে কৃষকদের মনে জাগে আনন্দের শিহরন। মাঠে মাঠে বীজ বোনার এটাই তো উপযুক্ত সময়। তাদের বুকে অনেক স্বপ্ন। নতুন ফসলে ভরে উঠবে ধানের গোলা। নবান্ন উৎসবে মেতে উঠবে কৃষকদের গৃহপ্রাঙ্গণ। তবে প্রকৃতি অপ্রসন্ন হয়ে কখনো-কখনো গ্রামের মানুষের বুকে হাহাকার, আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত বর্ষণে ভেসে যায় ঘর-বাড়ি, ফসল নষ্ট হয়ে জলের তলায় চলে যায় সমগ্র মাঠ। কৃষকদের বুকে নেমে আসে ঘন অন্ধকারের কালো ছায়া।

বর্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবন : 

বর্ষার সঙ্গে বাঙালি জীবনের এক গভীর নৈকট্য। বর্ষা বাঙালির মনকে ছুঁয়ে নতুন ভাবনার জন্ম দেয়। সব সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে ওঠে মন। রচিত হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। রথযাত্রা, ঝুলন, জন্মাষ্টমী, বীজবোনা, মানসাপূজা ইত্যাদির উৎসব আয়োজন এই ঋতুরই উপহার। বর্ষামঙ্গল, বৃক্ষরোপণ উৎসবও এই সময়েই অনুষ্ঠিত হয়।

বর্ষা ও বাংলা সাহিত্য : 

বর্ষা চিরকালীন, তবু বাংলার বুকে বর্ষার আগমন প্রতি ঋতুতে নবভাবে, নবরূপে। তাইতো কবিচিত্ত বর্ষাকে এত আপন করে পেতে চায়। সংগীতে, কবিতায়, গল্পে নানারূপে রূপময়ী করে চিত্রিত করেই কবিচিত্তে থাকে না প্রশান্তি। কোনো-কোনো কবি এঁকেছেন বর্ষার দুঃখের চিত্র। কবি কালিদাসের কল্পনায় অনন্ত বিরহের চিত্র ধরা পড়েছে ‘পূর্বমেঘ’ ও ‘উত্তরমেঘ’ রূপে মেঘদূতের পাতায়। বর্ষা মানুষের আবেগমথিত হৃদয়ের বিরহব্যথার, আশ্বাসের নব প্রেরণার বার্তা বহন করে আনে।

উপসংহার : 

বর্ষা ঋতুরানি। বাংলার বর্ষা রূপবৈচিত্র্যে অনন্য। ভালোবাসার উম্ন স্পর্শে তা সজীব। বর্ষার আবির্ভাবেই অহল্যা মাটির অভিশাপ মোচন। বর্ষা রুক্ষ ধরণির বুকে শীতলতার সিক্ত ছোঁয়ায় শীতল করে তোলে। বর্ষা কৃষকমনের দোসর; কবিমনের প্রেরণা, বিরহী চিত্তের সান্ত্বনা। শত দুঃখের মাঝে বর্ষাই আনন্দ। এ আনন্দ চির অমলিন, চির নবীন। বর্ষা তাই বাংলার মানুষের একান্ত আপনার।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) তোমার প্রিয় ঋতু (২) বর্ষার পল্লিপ্রকৃতি।

Leave a Comment