পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও  তার প্রতিকার  প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও তার প্রতিকার

ভূমিকা

প্রকৃতির অবদান চিরকালীন। নদী তার মধ্যে অন্যতম। নদীর করুণাধারায় ধরণি হয়েছে শস্যবতী। কিন্তু মানুষ সমৃদ্ধির পথে বিজ্ঞানকে আশ্রয় করায় প্রকৃতির অবদানকে ভুলে গিয়ে খামখেয়ালি পথে চলেছে। বনভূমি উৎপাটন করে নগর নির্মাণ করছে। নদীকে করছে শৃঙ্খলিত। তাতে প্রকৃতিও দুর্বার হয়ে উঠছে। নিচ্ছে প্রতিশোধ। অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প, খরার সঙ্গে ঘটছে বন্যা। নদী যেমন মানুষের কীর্তি রচনা করে, কীর্তি নাশও করে। নদী এক রূপে শুভদা, আবার অন্যরূপে সংহারকারিণী।

পশ্চিমবঙ্গের নদনদী : 

পশ্চিমবঙ্গ নদীমাতৃক রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী গঙ্গা। একটি ধারা মুরশিদাবাদের কাছে এসে ‘পদ্মা’ নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর একটি ধারা ভাগীরথী। যার দক্ষিণ অংশ হুগলি নদী। এর অনেক উপনদী রয়েছে। এরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ভাগীরথী- হুগলির সঙ্গে মিশেছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে পার্বত্য অঞ্চলে হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়েছে তিস্তা, মহানন্দা, তোর্সা, জলঢাকা, সঙ্কোশ ইত্যাদি। এগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট। পশ্চিমদিকে রয়েছে ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ, কংসাবতী, হলদি, সুবর্ণরেখা ইত্যাদি। সুন্দরবন অঞ্চলে রয়েছে মাতলা, গোসাবা, সপ্তমুখী, কালিন্দী, ইছামতী, বিদ্যাধরী প্রভৃতি। এগুলি জোয়ারের জলে পুষ্ট।

বন্যার চিত্র : 

পশ্চিমবঙ্গের বন্যা নিত্যদিনের ঘটনার মতো প্রতি বছর দেখা দেয়ই। কখনও অতি ভয়ংকর রূপে বা কখনও সামান্য ভয়ংকর রূপে বন্যা হয়। বিশেষত উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চল। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু অঞ্চল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ই। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় বন্যা কবলিত, ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, গবাদি পশু মারা যায়, মানুষও আন্ত্রিকে, সাপে কেটে, জলোচ্ছ্বাসে মারা যায়, সড়কপথ-রেলপথ ভেঙে যায়।

বন্যার কারণ : 

নদীর রুদ্র রূপের খেলাই হল বন্যা। তখন সে দুকূল ছাপিয়ে জনপদ ভাসায়। ঘরবাড়ি গ্রাস করে। মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নেয় বহু জীবন। বন্যার অন্যতম কারণ অতিবৃষ্টি। এ ছাড়া, মানুষের দূরদর্শিতার অভাবে বন্যার কবলে মানুষকে পড়তে হয়। নদী চলার পথে ক্ষয়কাজ যেমন করে তেমন অবক্ষেপণও করে। পার্বত্যগতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত নুড়ি, পাথর, বালি, কাদা নিম্নগতিতে জমা হয় এবং চড়ার সৃষ্টি হয়। নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়। পাশাপাশি নদীর সঙ্গে যুক্ত যে খাল, বিল, নালা প্রভৃতি দিয়ে জল প্রবাহিত হয়, সেখানকার নাব্যতাও কমে যায়। এর ফলে বৃষ্টির জলের পরিমাণ বেড়ে গেলেই বন্যার আকার ধারণ করে। অনেক সময় নদীবাঁধ ঠিক সময়ে সংস্কার না করার জন্য জলের চাপে বাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হয়।

প্রতিকার : 

বন্যা প্রায় প্রতিবছরই তার সর্বনাশা চেহারা নিয়ে উপস্থিত হয়। কখনও সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চলে তার তাণ্ডব। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও প্রচুর। তাই বন্যা প্রতিরোধে মানুষ আজ সংকল্পবদ্ধ। সরকারি পর্যায়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণে নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নদী প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। এদের মধ্যে ময়ূরাক্ষী-কংসাবতী, ফরাক্কা বাঁধ, তিস্তা-জলঢাকা, দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য। এর জন্য অবশ্য মানুষ তিনভাবে উপকৃত হয়েছে; (১) বন্যার প্রকোপ হ্রাস পেয়েছে, (২) জলসেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়েছে, (৩) জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ প্রশস্ত হয়েছে। তবে এগুলি বন্যা নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত উপকরণ নয়। প্রয়োজন নদীর নাব্যতা বাড়ানো। ভূমিক্ষয় রোধ করাও একান্ত প্রয়োজন। এজন্য অরণ্যসম্পদ রক্ষা করতে হবে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। বাঁধের জলধারাগুলির পরিমাণ বাড়াতে হবে। এর সঙ্গে খালের গভীরতাও বজায় রাখতে হবে।

উপসংহার : 

বন্যা মানুষের কাছে আতঙ্ক। তবে বন্যার মতো ধ্বংসের মধ্যেও কিছু সৃষ্টির আনন্দ রয়েছে। বন্যায় মাটি উর্বর হয়। শস্যময়ী হয়ে ওঠে ধরা। তবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজ্ঞান-বুদ্ধি নিয়ে দেশের শাসককে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থাকবে। আর তাকে শুভবুদ্ধি, মিলিত কর্মপ্রয়াস, উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে প্রয়াসী হতে হবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) বন্যা পশ্চিমবঙ্গের অভিশাপ, (২) পশ্চিমবঙ্গের নদনদী ও বন্যা।

Leave a Comment