বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা 400+ শব্দে

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

প্রকৃতি আপন খেয়ালে চলে। প্রকৃতির ভারসাম্য প্রকৃতি নিজেই রক্ষা করে। প্রকৃতির বুকে মানুষ গড়ে তুলেছে সমাজ। ঘটেছে সভ্যতার অগ্রগতি। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে উন্নত মানবসভ্যতা। দিকে দিকে ছড়িয়েছে বিজ্ঞানের জয়রথ। মর্ত্য ছেড়ে সে রথ চলেছে চাঁদের সীমানা পেরিয়ে মঙ্গলের পথে। তৈরি হয়েছে স্পেস স্টেশন। কিন্তু সভ্যতার বিবর্তনে পৃথিবীর তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটছে, যার জন্য বিজ্ঞানীরা চিন্তিত। গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক। প্রাণীজগতের কাছে এক সতর্কবার্তা।

তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণ

মানবসভ্যতার অগ্রগতির মূলে বিজ্ঞানের অবদান। আবার এই বিজ্ঞানের পরোক্ষ প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রার পরিবর্তন। সভ্যতার অগ্রগতির চিহ্ন লক্ষ লক্ষ কলকারখানা। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি নানান গ্যাস। বায়ুমণ্ডলে সঞ্চিত হচ্ছে এই গ্যাস। এগুলি গ্রিনহাউস গ্যাস। এরই ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, পৃথিবীকে তপ্ত করে তুলছে।
        পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আর একটা কারণ নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তৈরি হয়েছে বাসযোগ্য ভূমি, গড়ে উঠেছে নগর। পৃথিবীর মোট ভূ-ভাগের পঞ্চাশ শতাংশ বনাঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে পঁয়ত্রিশ শতাংশে। ফলে জ্বালানি থেকে, কলকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে বর্ধিত হয়েছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে সতর্কতা

১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে সতর্ক করে পৃথিবীতে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯২-এ ব্রাজিলে রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে সংঘটিত হয় ‘বসুন্ধরা বৈঠক’। এই বৈঠকে একটি সত্য স্বীকৃত হয় যে, আধুনিক সভ্যতার প্রগতির পদক্ষেপেই সূচিত হচ্ছে দূষণের উৎস। তাই পৃথিবীকে রক্ষার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে পরিবেশ বাঁচানোর লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠেছিল। ১৯৯৭-এ কিয়োটা চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাতে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির উৎপাদন কমানোর কথা বলা হয়েছিল।

উষ্ণায়নের প্রভাব

প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার অর্থ মনুষ্যদেহে, জীবদেহে, উদ্ভিদজগতে ও জড়জগতে বিপত্তি টেনে আনা । বিজ্ঞানীরা জার্নালেন, মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেও এর প্রভাব পড়বে। বায়ুর গতিপথ পরিবর্তিত হবে। বৃষ্টির অভাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল খরাপ্রবণ হবে। ঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হবে না। উদ্ভিদ ও প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে বলেছেন, ওজোনস্তরে ছিদ্র দেখা গিয়েছে। ওজোনস্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি বা আলট্রাভায়োলেট রে থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। ওজোনস্তরে ছিদ্র হওয়ার অর্থ পৃথিবীর ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করা। যার প্রভাবে মানুষ হারাবে দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাবে এবং মানুষ আক্রান্ত হবে ক্যানসারে।

উপসংহার

মানবসভ্যতা ক্রমোন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি মানুষকে গতিময় করেছে। এর হাত ধরেই মানুষ লক্ষ্যে পৌঁছাবে। কিন্তু সভ্যতা যেন প্রকৃতির ওপর খবরদারি না করে। কেননা পৃথিবীতে মানুষই থাকবে, মানুষই সত্য। সভ্যতা মানুষ গড়েছে কিন্তু পূর্ণ সচেতনতার অভাবে আত্মদন্তী ক্ষমতার পোষণে মানুষ যেন মানুষের অপমান না করে, সভ্যতার ক্রমসংকটকে আরও সংকটতর পর্যায়ে না নিয়ে যায়। বিজ্ঞানের হাত ধরে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব মানুষের, পথপ্রদর্শক এখানে বিজ্ঞানীরা।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) গ্লোবাল ওয়ার্মিং, (২) উষ্ণায়ন বনাম পরিবেশ, (৩) বিশ্ব পরিবেশের দুঃখময় দিন।

Leave a Comment