আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস/একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য/আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ( Exclusive Answer)
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – মাতৃভাষা মানুষের চিৎশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তি, সৃষ্টি শক্তি, কল্পনাশক্তি বিকাশের সহায়ক। মানুষের এই অন্তর্নিহিত পূর্ণতার বিকাশই হল শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের সহজাত অধিকার, সভ্যতার অগ্রগতির অনিবার্য অঙ্গীকার; সেখানে কৃত্রিমতার কোনো অবকাশ নেই। তাই কোনো শিক্ষাকে স্থায়ী করতে হলে, তাকে চিরপরিচিত মাতৃভাষায় সম্পূর্ণ মিশিয়ে দিতে হয়।
ভূমিকা :
মাতৃভাষা মানুষের চিৎশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তি, সৃষ্টি শক্তি, কল্পনাশক্তি বিকাশের সহায়ক। মানুষের এই অন্তর্নিহিত পূর্ণতার বিকাশই হল শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের সহজাত অধিকার, সভ্যতার অগ্রগতির অনিবার্য অঙ্গীকার; সেখানে কৃত্রিমতার কোনো অবকাশ নেই। তাই কোনো শিক্ষাকে স্থায়ী করতে হলে, তাকে চিরপরিচিত মাতৃভাষায় সম্পূর্ণ মিশিয়ে দিতে হয়।
২১ ফ্রেব্রুয়ারির রক্তাক্ত দিন :
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি একটি ঐতিহাসিক দিন। বর্তমানে সারা বিশ্বে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত। এর পিছনে পড়ে রয়েছে চোখের জলে ভেজা মমতাময়ী মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নেওয়া তরুণ প্রাণের রক্তে লেখা সকরুণ ইতিহাস।
পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষের ভাষা ছিল তখন বাংলা। দাবি উঠেছিল বাংলাই হোক পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকরী হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা ছিল উর্দু। সেখানেই অবস্থান তদানীন্তন রাষ্ট্রপ্রধানদের। তাঁদের ইচ্ছাকে লঙ্ঘন করার অধিকার কোথায়? তাঁদের ঘোষণা পূর্ব পাকিস্তানেও উর্দুভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পরিগণিত হবে। এই নির্দেশ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কাছে চরম আঘাত। সংঘটিত হল আন্দোলন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হল ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি হল জোরালো। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান নির্দেশ দেন উর্দুই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। বাংলা ভাষার দাবি আরও জোরালো হল। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর নিহত হলেন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন খাজা নাজিমউদ্দিন। তিনি ঘোষণা করলেন উর্দু রাষ্ট্রভাষা তো হবেই, বাংলাকে আরবি হরফে লিখতে হবে। সেই নির্দেশের পরেই বাংলাভাষা আন্দোলনকারী মানুষ প্রতিবাদে গর্জে ওঠে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতীক ধর্মঘটে শামিল হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। পাকিস্তান সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আন্দোলনকারীদের বিশাল জমায়েত হয়। ১৪৪ ধারা অমান্য করে প্রতিবাদী ছাত্রসভা। হিংস্র পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বহু তরতাজা প্রাণ। তারই ফলশ্রুতি ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদ দিবস পালন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। রাষ্ট্রপুঞ্জ স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ফ্রেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ রূপে গণ্য করেছেন।
আন্তর্জাতিক ভাষাদিবসের তাৎপর্য :
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। এমন স্মরণীয় দিন ভোলা যায় না। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক ভাষাদিবস রূপে চিরঠাঁই করে নিল। রাষ্ট্রপুঞ্জ গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রশংসার দাবি রাখে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই শুভ স্বীকৃতি মাতৃভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ।
উপসংহার :
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিপালিত হচ্ছে মর্যাদার সঙ্গে। ভাষা মানুষের মধ্যে আনে সংহতি। ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি সবার প্রাণে প্রেরণা সঞ্চার করুক। শহিদদের কথা আমাদের হৃদয়ে সঞ্চারিত হোক। মাতৃভাষার গৌরব যেন অনুভব করি প্রতিনিয়ত।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য, (২) আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।
সমাজগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা/সমাজসেবা ও ছাত্রদল/ছাত্রদের সামাজিক দায়িত্ব/সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজ
ভূমিকা :
ছাত্রসমাজের উদ্দেশ্যে যত কথাই বলা যাক না কেন, তাতে তাদের চরিত্র বৈশিষ্ট্যের ঠিকানা পাওয়া যায় না। তারা প্রকৃতির মতোই অধরা। বিদ্যুতের গতির মতো তাদের গতি। দুঃখ সাগর মাঝে, আনন্দের লহরি নিয়ে চলে এদের তরি। সংসার কাননে এরাই সৌরভসম পুষ্প। সংসার প্রাঙ্গণের সংস্কাররূপ বেড়াজালকে এরাই অপসারিত করে। এরাই ভবিষ্যতের স্বপ্নসাধক।
ছাত্রজীবনের লক্ষ্য ও প্রকৃতি :
ছাত্রসমাজের স্বতন্ত্র চিন্তা- ভাবনা তাদের চরিত্র বৈশিষ্ট্যকে পৃথক মাত্রা দিয়েছে। একদিকে যেমন জ্ঞান আহরণের তীব্র আকুতি, অন্যদিকে পরের কারণে স্বার্থ বলি দিতে ছাত্রসমাজ আগুয়ান। সংসারের ডাক পেলে যে-কোনো প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে চলতে তারা কঠিন কঠোর। সংগ্রামে সাফল্যলাভের জন্য তারা চরম মূল্য দিতেও প্রস্তুত। যুবসমাজের এই ঐকান্তিক স্বার্থহীন কর্মপ্রেরণা চিরদিনই সমাজের বড়োদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে এসেছে।
সামাজিক কর্মযজ্ঞে ছাত্রসমাজ :
সামাজিক ক্ষেত্র বহু ব্যাপক। সমাজকল্যাণে উদ্বুদ্ধ প্রাণ ছাত্রসমাজ। চারদিকে নিরক্ষর মানুষের বোবা চাহনি; বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগত চলছে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে হিংসা মারামারি। সব পরিস্থিতিতে ছাত্রসমাজ এগিয়ে যায়। এসব কাজে ছাত্রসমাজই হোতা। ছাত্রদের ত্যাগেই জীবন ধন্য। ত্যাগব্রতের দীক্ষায় নিষ্ঠুর সংকটের অবসান ছাত্রসমাজই করেছে। তাই তাদের ব্যবহার করতে হবে সঠিকভাবে।
শিক্ষাপ্রসারে ছাত্রসমাজ :
জিজ্ঞাসু মন নিয়ে ছাত্রসমাজ যেমন শিক্ষাভাণ্ডারের পূর্ণতা আনে, পাশাপাশি সমাজের নিরক্ষর মানুষের অন্ধকার জীবনকে আলোকিত করতেও নিজেদের নিয়োজিত করে। শিক্ষাপ্রসারে কেন্দ্রীয় স্তরে বা রাজ্যস্তরে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মাবকাশে বা পূজাবকাশে ছাত্রসমাজ নিরক্ষরদের শিক্ষাদানে অনুপ্রাণিত হয়। নিরক্ষরতাকে অভিশাপরূপে চিহ্নিত করে বসে থাকলেই সমস্যার সমাধান হয় না, প্রয়োজন সমাধানের সঠিক পথনির্দেশ এবং তার বাস্তব রূপায়ণ। ছাত্রসমাজই এতে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।
সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের বাধা ও প্রতিকার :
ছাত্রসমাজের দুর্বার শক্তি। কিন্তু সেই শক্তির কাছে রয়েছে সামাজিক বাধা নিষেধের বেড়াজাল। রয়েছে পারিবারিক বন্ধন। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো বন্ধন রয়েছে তা হল আদর্শহীন নেতৃত্ব। প্রতিটি মানুষ কাউকে না কাউকে অনুসরণ করে। তাই অনুসৃত পথ এবং অনুকরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব যদি আদর্শবান না হয়, তাহলে জীবনে জিজ্ঞাসা থেকে যায়। এ ছাড়াও রয়েছে ব্যক্তিগত জীবনে হতাশা, ভবিষ্যৎ জীবনের অনিশ্চয়তা। যার জন্য বর্তমান ছাত্র-যুবসমাজ দিশাহারা। তাই বড়োদের দায়িত্ব কর্মমুখর প্রাণবন্ত, উচ্ছল জীবনের অধিকারী ছাত্রসমাজকে প্রেরণা দান করা।
উপসংহার :
ছাত্ররা সমাজের আয়ুধ। ছাত্রশক্তি সমাজের বল ভরসা। সমাজকল্যাণ যজ্ঞ ছাত্রসমাজ ছাড়া পূর্ণ নয়। সমাজের যে-কোনো অশুভ শক্তির সঙ্গে সংগ্রাম করে এই ছাত্রসমাজই। উন্নয়নে যেমন অর্থ প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন ছাত্র উপাদান। একমাত্র ছাত্র-উপাদানই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। তাই • অহংকার নয়, হতাশা নয়, সংঘাত নয় – চাই জাতীয়তাবোধের উন্মেষ। ছাত্রসমাজ বুঝুক বয়স্করা তাদের চালক। বয়স্কদের স্বপ্নও সার্থক হোক ছাত্রদের মধ্য দিয়ে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) সমাজসেবা ও ছাত্রদল, (২) ছাত্রদের সামাজিক দায়িত্ব, (৩) সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজ।
আরও পড়ুন – সার্ভে পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা