রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথার অবসানের কারণগুলি আলোচনা করো। – আজকের পর্বে রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথার অবসানের কারণগুলি আলোচনা করা হল।
রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথার অবসানের কারণগুলি আলোচনা করো। |
রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথার অবসানের কারণগুলি আলোচনা করো। দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে মুক্তিদাতা জার বলা হয় কেন? |
ভূমিকা
ভূমিদাস প্রথা ছিল রাশিয়ার একটি অমানবিক সুপ্রাচীন প্রথা। এই প্রথার সাথে রাশিয়ার আর্থসামাজিক ব্যবস্থা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। ভূমিদাসদের জীবন অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশায় পরিপূর্ণ ছিল তারা জমিদারদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল ফলে তাদের বিক্রি করা, বন্ধক রাখা, ভাড়া খাটানোর অধিকার ভূমিদারদের ছিল। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে এক আদেশ জারি করে যুগ ধরে চলে চলে আসা ভূমিদাসদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে ভূমিদাস প্রথা আসান করেন। এই জন্য তাকে মুক্তিদাতা জার বলা হয়।
ভূমিদাস প্রথার অবসানের কারণ
(ক) অদক্ষতা
উনিশ শতকের প্রথম থেকেই রাশিয়ায় প্রবলভাবে শিল্পায়ন শুরু হয় ফলে ভূমিদাসদের দিয়ে আগের মতো অর্থনৈতিক প্রয়োজন সিদ্ধ হচ্ছিল না। শিল্পের জন্য অদক্ষ ভূমিদাস অপেক্ষা দক্ষ বেতন ভুক্ত শ্রমিক অনেক বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
(খ) ভূস্বামীদের অনিচ্ছা
মুদ্রার অর্থনীতি ও বাজারের জন্য প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভূমিদাসদের শ্রমের নিম্নমান প্রকট হয়ে উঠে। ছোটোখাট ভূস্বামীদের পক্ষে ভূমিদাসদের ভরণ পোষণ কঠিন হয়ে পড়ে ফলে ভূমিদাসদের
(গ) কৃষিক্ষেত্রে ব্যর্থতা
সময়ের সাথে সাথে রাশিয়ার যায়। ব্যাপারে তাদের অনিচ্ছা প্রকট হয়ে উঠে। বিজ্ঞান সম্মত কৃষি প্রযুক্তি অদক্ষ ভূমিদাসদের পক্ষে প্রয়োগ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে ফলে তাদেরও প্রয়োজন ফুরিয়ে
(ঘ) কর্তৃত্ব হ্রাস
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর ভূমিদাসদের ওপর অভিজাত ও জমিদারদের কর্তৃত্ব হ্রাস পায় এমনকি ভূমিদাসদের ক্ষোভ-জারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কৃষকরা উদার নৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। প্রথম নিকোলাসের আমলে চারশটি কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল যা ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদকে ত্বরান্বিত করেছিল।
(ঙ) ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজয়
ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল ভূমিদাসদের নিয়ে গড়ে উঠা রাশিয়ার সেনাদল। এদের অদক্ষতা, নির্বুদ্ধিতা রাশিয়ায় এদের অপ্রয়োজনীয় করে তোলে।
(চ) বুদ্ধিজীবীদের প্রভাব
রাশিয়ার বহু কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ভূমিদাস প্রথার আসানকল্পে কলম ধরেন। পুসকিন, টলস্টয়, গোগোল, তুর্গেনিভ, গ্লিনকো ছিলেন এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
(ছ) দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের ভূমিকা
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ছিলেন এক উদারনৈতিক শাসক তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে ভূমিদাস প্রথা যুগোপযোগী নয় সুতরাং এর উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। রাশিয়ায় এভাবেই রাষ্ট্রীয় ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ ঘটে।
দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে মুক্তিদাতা জার বলার কারণ
রাশিয়ার ইতিহাসে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে মুক্তিদাতা জার বলা হয়। তাঁর রাজত্বকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার কর্ম হল ভূমিদাস প্রথার বিলোপ। অভিজাতদের বাধা তুচ্ছ করে উদার মনের মানুষ দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ১৯ ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঘৃণিত ভূমিদাস প্রথার বিলোপ করে ভূমিদাসদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন বলে তাকে মুক্তিদাতা জার বলা হয়।
মুক্তির ঘোষণাপত্রে বলা হয়-
- ভূমিদাস প্রথার অবসান হবে
- ভূমিদাসরা মুক্ত হয়ে স্বাধীন নাগরিকদের মর্যাদা পাবে
- ভূমিদাসরা পূর্বের প্রভুর যে জমি চাষ করত তার অর্ধেক তাকে দেওয়া হবে।
- জমিদাররা ক্ষতিপূরণ পাবে।
উপসংহার
ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদের ফলে ভূমিদাসরা স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা লাভ করে পশুর মতো ভূমিদাসদের বেচা কেনা, ভাড়া খাটানো বন্ধ হয়। কৃষি শিল্প বাণিজ্যের অগ্রগতি ঘটে রাশিয়া আধুনিকীকরণের দিকে এগিয়ে যায় যদিও ভূমিদাস প্রথা ত্রুটিমুক্ত ছিল না কেননা ভূমিদাস প্রথা আইন অনুসারে জমির ওপর কৃষকদের অধিকার স্বীকৃত হয়নি। তবুও দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের শুভ প্রচেষ্টার কথা ইতিহাস মনে রেখে তাকে মুক্তিদাতা জার হিসেবে স্মরণীয় করে রেখেছে।
FAQs on – রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথার অবসানের কারণগুলি আলোচনা করো। দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে মুক্তিদাতা জার বলা হয় কেন
রাশিয়ায় ভুমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করেন কে?
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার।
রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ ঘটানো হয় কবে?
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে।
দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে মুক্তিদাতা জার বলা হয় কেন?
দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ১৯ ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঘৃণিত ভূমিদাস প্রথার বিলোপ করে ভূমিদাসদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন বলে তাকে মুক্তিদাতা জার বলা হয়।