সংলাপ লেখার নিয়ম |
সংলাপ হল দুজন বা তার বেশি মানুষের মধ্যে কথোপকথন। সংলাপের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Dialogue। মনের ভাব আদানপ্রদানের জন্যই আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলি। কোনো একটি প্রসঙ্গে বা বিভিন্ন প্রসঙ্গে আমাদের মত বিনিময়কে কেন্দ্র করেই সংলাপ গড়ে ওঠে। তাই সংলাপে মানুষের চিন্তা, যুক্তি, আদর্শ, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। সাহিত্যে একমাত্র নাটক হল সম্পূর্ণ সংলাপ নির্ভর। তবে নাটকের সংলাপের সঙ্গে সাধারণ সংলাপ রচনার পার্থক্য আছে। বিশেষত এই স্তরে আমরা কোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রাণবন্ত সংলাপ রচনার চর্চা করব। তাই প্রথমে সংলাপ রচনার কৌশল বা বৈশিষ্ট্যগুলি জেনে নেওয়া যাক।
(১) নাটকের সংলাপ ঘটনা-চরিত্র-আবহ প্রভৃতি নানান বিষয়ের ঘাত প্রতিঘাতের ফসল। কিন্তু বিষয় কেন্দ্রিক সাধারণ সংলাপ কোনো একটি বিষয়কে ঘিরে দুই ব্যক্তির ভাবনার তাৎক্ষণিক আদানপ্রদানের প্রকাশ। এই ধরনের সংলাপে বিষয়টি যেমন গুরুত্ব পায় তেমনি খোলামেলা মতামত প্রকাশেরও সুযোগ থাকে।
(২) দুজন ব্যক্তির কথোপকথনের ক্ষেত্রে বিষয়টির গুরুত্ব বা গভীরতা। বুঝে নিয়ে লিখতে হয়। যেমন: বাস কনডাক্টর ও যাত্রীর কথোপকথনের সুর, দুই বন্ধুর কোনো চলচ্চিত্র আলোচনার সুর, কোনো গল্পের বইয়ের বিষয় নিয়ে কথা কিংবা সামাজিক ভাবে স্পর্শকাতর কোনো বিষয়ে তাদের মতামতের সুর সর্বদাই পরস্পরের থেকে আলাদা হবে।
(৩) লেখার সময় মনে রাখবে সংলাপ যেন বক্তৃতাধর্মী না হয়। দীর্ঘ ভাষণ বা বক্তব্য সংলাপের পক্ষে ক্ষতিকর। কারণ মানুষের মুখের কথাবার্তার জীবন্ত গতিময় ভাষ্য হল সংলাপ। তাই সংলাপে যেন কখনোই একঘেয়েমি না আসে। পারস্পরিক মত বিনিময়ের সময় তর্কবিতর্ক সামান্য স্থান পেলেও লেখাটি যেন নিছক তর্কবিতর্কে পরিণত না হয়, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
(৪) সংলাপের ভাষা হবে সাবলীল ও সহজ। আমরা যেভাবে দৈনন্দিন জীবনে কথা বলি, সেই স্বাচ্ছন্দ্যের ভাব কথাবার্তার মধ্যে বজায় রাখতে হবে। তাই সংলাপের শুরুতে ‘কেমন আছ’, ‘অনেক দিন পরে দেখা’, ‘কোথায় চললে’ কিংবা শেষে ‘বিদায়’, ‘আজ আসি’, ‘ভালো থেকো’-এ সমস্ত আনুষ্ঠানিক সম্ভাষণ বর্জন করে সরাসরি প্রাসঙ্গিক মতামত বিনিময়কেই সরসভাবে উপস্থাপিত করা উচিত।
(৫) একই বক্তব্য একাধিক বার ব্যবহার করার প্রবণতা সংলাপের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই সেই দিকে যেমন সজাগ দৃষ্টি রাখবে, ঠিক তেমনই অনাবশ্যক বিবরণধর্মীতা বা বর্ণনার পরিবর্তে বিষয় অনুসারে নিজস্ব মতামত এবং দৃষ্টিভঙ্গিকেই বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে পারম্পর্য অনুযায়ী স্বল্পপরিসরে ও দৃঢ়তার সঙ্গে বক্তার মতামত প্রকাশ সংলাপ রচনায় একটি বিশেষ গুণ বলে বিবেচিত হয়।
(৬) উভয় বক্তার কথাবার্তার পরিমাণের মধ্যে যেন ভারসাম্য থাকে। কোনো একজন বক্তার একতরফা সংলাপ বা অতি সংক্ষিপ্ত কিংবা অতি দীর্ঘ সংলাপ লেখা চলবে না। এই সমস্ত দিকগুলি মাথায় রেখে কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে সংলাপটি লিখতে হবে।