পণপ্রথার কুফল বিষয়ে দুই বান্ধবীর কাল্পনিক সংলাপ

পণপ্রথার কুফল বিষয়ে দুই বান্ধবীর কাল্পনিক সংলাপ
পণপ্রথার কুফল বিষয়ে দুই বান্ধবীর কাল্পনিক সংলাপ
সুচেতা: জানিস, কাল শতরূপা রাত্রিবেলায় হাসপাতালে ভরতি হয়েছে।
কৃত্তিকা: কেন, কী হয়েছে ওর? কিছুদিন আগেই দেখা হয়েছিল ওর সঙ্গে। ভালোই তো ছিল তখন! অবশ্য ওকে দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছিল।
সুচেতা: অচিন্ত্যপূর্ব একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে মেয়েটা। আবার, পণপ্রথার নিষ্ঠুর কশাঘাতে চরম আঘাতপ্রাপ্ত হল একটা প্রাণ। কাল ওর ননদ আর শাশুড়ির মিলিত প্রয়াসে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে শতরূপা। মর্মান্তিক ঘটনা! ওরা দুজন গ্রেফতার হয়েছে বটে, কিন্তু সমাজের কী অবস্থা হয়েছে বল তো!
কৃত্তিকা: হ্যাঁ, সমাজটা এখন লোভ-লালসা আর স্বার্থপরতার পাঁকে সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। তা না হলে কি বিয়ের মতো একটা পবিত্র বন্ধন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! আমরা মেয়েরা কত সুখস্বপ্ন নিয়ে স্বামীর ঘরে যাই। অথচ পণপ্রথার মতো একটা নির্মম প্রথার কারণে কত শতরূপাই না-জানি অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুকে বরণ করে নিতে বাধ্য হচ্ছে!
সুচেতা: সত্যিই তাই। আমরা যতই নিজেদের একবিংশ শতকীয় উন্নতমনস্ক মানুষ বলে পরিচয় দিই না কেন, ঘরে ঘরে তথাকথিত অর্থে শিক্ষিত জনসাধারণের সংখ্যা যতই বাড়ুক না কেন, প্রকৃত অর্থে শিক্ষালাভ আজও আমাদের সম্পূর্ণ হয়নি।
কৃত্তিকা : তা নয় তো কী! মানুষকে মানুষ মনে করার শিক্ষা কি আমরা পেয়েছি? আজও বর্ণ-বিত্ত নির্বিশেষে যে-কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্রের হাতে মেয়েকে সমর্পণের জন্য কন্যার পিতাকে যথোপযুক্ত মূল্য প্রদান করতে হয়। পাত্রের আর্থিক সামর্থ্যের ভিত্তিতেই পণ ও দানসামগ্রীর পরিমাণ নির্ধারিত হয়। আর কোনোভাবে যদি কোনো-এক আধুনিক নিরুপমার বাবা তাদের এই লোেভাগ্নি প্রশমনে সমর্থ না হয় তাহলেই অনিবার্যভাবে মেয়েদের জীবনে ঘনিয়ে আসে মৃত্যুর ঘন কালো মেঘ।
সুচেতা : এক্ষেত্রে পাত্রটির দায়িত্বকেও অস্বীকার করা যায় না। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তারা পণপ্রথার মতো ঠুনকো প্রথা এবং তজ্জনিত কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে সংঘটিত অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদজ্ঞাপন করে না। যে শিক্ষা কার্যক্ষেত্রে কণ্ঠে ভাষা জোগায় না, সে শিক্ষা কি অর্থহীন নয়? অবশ্য এ কথাও ঠিক যে, কিছু ক্ষেত্রে তাদের অজান্তেও অনেক কিছু ঘটে। শতরূপাও তো ওর স্বামীকে কিছু বলত না, শুনলাম।
কৃত্তিকা: আজকের মেয়েরাও কেন যে বোঝে না অন্যায় সহ্য করাও অন্যায় করার সমতুল্য অপরাধ।
সুচেতা: আমরা নিজেদের আধুনিক বলে অহংকার করি। অথচ পণপ্রথার মতো অমূলক প্রাচীন প্রথাকে আজও আঁকড়ে ধরে আছি। সামাজিক এই কুপ্রথা থেকে আমরা মেয়েরা কবে যে নিস্তার পাব কে জানে!

Leave a Comment