বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার দুরবস্থা বিষয়ে দুই বন্ধুর কাল্পনিক সংলাপ |
সম্প্রীতি: সরকারি হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য তৈরি হলেও চিকিৎসা পদ্ধতির যে কী ভয়াবহ অবস্থা সে সম্পর্কে কিছু না বলাই ভালো।
সুলগ্না: সে আর বলতে! হাসপাতালগুলো তো আর মানুষের চিকিৎসার যোগ্য নেই। ফ্রি-বেডগুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। অস্বাস্থ্যকরভাবে সামান্য সামান্য ব্যবধানেই যে শুধু বেডগুলো রাখা হয় তাই নয়, মাটিতেও অস্থায়ী বেড পেতে রোগীদের রাখা হয়। বহুক্ষেত্রেই তারা চিকিৎসক আসার আগেই মারা যায়।
সম্প্রীতি : জায়গাগুলো পরিচর্যা তথা সংস্কারের অভাবে যেন নরকে পরিণত হয়েছে। উৎকট মর্মভেদী এক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে থাকে সর্বত্র। ফলে অসুস্থ ব্যক্তির রোগ নিবারণ সম্ভব হোক বা না-হোক তার পরিবার-পরিজনের মধ্যে রোগসংক্রমণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় বিপুল রূপে।
সুলগ্না : ডাক্তার পাওয়াও তো এখন মহার্ঘ্য বস্তু পাওয়ার সমতুল্য হয়ে উঠেছে। ইনটার্ন অর্থাৎ পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের দিয়েই মূলত প্রাথমিক চিকিৎসাপর্ব সমাধা করা হয়। আর কোনোভাবে কোনো মুমূর্ষু রোগীকে নিরীক্ষণের জন্য যদি বড়ো ডাক্তারের প্রয়োজনও হয়, তাহলেও তাঁদের দর্শন লাভ বিশেষ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে ওঠে।
সম্প্রীতি : বহুক্ষেত্রে তো দেখা যায় রোগীর আশেপাশে বিড়াল কিংবা জংলি ইঁদুরের আনাগোনা চলছে, যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাই করে না। আবার, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে যে গুটিকয়েক শয্যার ব্যবস্থা থাকে, সেগুলোও সংরক্ষিত থাকে কোনো মন্ত্রী বা তৎসমতুল্য ব্যক্তির সুপারিশধন্য ব্যক্তির জন্য। এমনটা তো অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গুরুতর কোনো অসুস্থ ব্যক্তি শুধুমাত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে অসময়ে মৃত্যুবরণ করে।
সুলগ্না: আমরা তো ভুল চিকিৎসার প্রসঙ্গ আর নবজাতক চুরির কথা ভুলেই যাচ্ছি! ভুল চিকিৎসা, ভুল রোগাবিষ্কার, শল্যচিকিৎসায় গাফিলতির খেসারত দিতে হয় কত অগুনতি মানুষকে। আমারই পরিচিত এক ব্যক্তির নবজাতিকা কন্যার সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও চিকিৎসকের কারণে তার বাহু সংযোগ স্থলটি দুর্বল হয়ে গেছে।
সম্প্রীতি : হাতের ব্যান্ডেজ কাটতে গিয়ে নবজাতিকার আঙুল কেটে ফেলার কথা কি ভুলে গেলি? অস্বাস্থ্যকর এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন চিকিৎসকে পূর্ণ ওই হাসপাতালগুলিতে যাওয়া যায় কি! যে চিকিৎসকের প্রতি অসীম বিশ্বাসে আমরা আমাদের জীবনপ্রদীপ তাদের হস্তে সমর্পণ করি, সেই বিশ্বাসই তো হাসপাতালের ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি অবশিষ্ট নেই।