ধাতু কাকে বলে? ধাতু সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর |
১ ধাতু কাকে বলে?
বাংলা ভাষায় সমাপিকা বা অসমাপিকা ক্রিয়াপদের বিভক্তি বিবর্জিত মূল ও অবিভাজ্য অংশকে ধাতু বলে।
২। বাংলা ভাষায় ধাতু কত প্রকার ও কী কী?
বাংলা ভাষায় ধাতু চার প্রকার। যথা- মৌলিক ধাতু, সাধিত ধাতু, সংযোগমূলক ধাতু, যৌগিক ধাতু।
৩। একদল বা মৌলিক ধাতু কাকে বলে?
বাংলায় যেসব ধাতু একটিমাত্র দল বা অক্ষর নিয়ে গঠিত এবং যাদের আর বিশ্লেষণ করা যায় না, সেই স্বয়ংসিদ্ধ ধাতুকে মৌলিক বা একদল বা সিদ্ধ ধাতু বলে।
৪। ধূ-ধর, হাঁট, কর, খা ইত্যাদি কী ধরনের ধাতুর উদাহরণ?
ধূ-ধর, হাঁট, কর্, খা, ইত্যাদি একদল বা মৌলিক ধাতুর উদাহরণ।
৫। বহুদল বা সাধিত ধাতু কাকে বলে?
প্রত্যয়যোগে গঠিত ধাতুকে সাধিত ধাতু বলা হয়। এই ধরনের ধাতুকে বিশ্লেষণ করলে অন্তত একটি মৌলিক ধাতু বা শব্দ ও একটি প্রত্যয় পাওয়া যায়। যেমন-পড়ু + আ = পড়া, হাত + আ = হাতা।
৬। গঠন অনুযায়ী সাধিত ধাতু কত প্রকারের ও কী কী?
গঠন অনুযায়ী সাধিত ধাতু তিন প্রকারের- নাম ধাতু, ② প্রযোজক ধাতু এবং কী ধ্বন্যাত্মক ধাতু।
৭। নাম ধাতু কাকে বলে?
বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয় -এই ধরনের নাম শব্দের পর ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে যে সাধিত ধাতু হয়, তাকে নাম ধাতু বলে।
যেমন- রাঙ + আ = রাঙা (রাঙানো অর্থে)
ঘাম + আ = ঘামা (ঘামানো অর্থে)
৮। প্রযোজক ধাতু কাকে বলে?
অন্যকে দিয়ে কোনো কিছু করানো বোঝাতে মৌলিক ধাতুর পরে ‘আ’-প্রত্যয়যোগে যে সাধিত ধাতু গঠিত হয়, তাকে প্রযোজক ধাতু বলা হয়।
যেমন- দেখ্ + আ = দেখা
পড় + আ = পড়া
৯। ধ্বন্যাত্মক ধাতু কাকে বলে?
যেসব ধ্বন্যাত্মক বা অনুকার শব্দ ধাতুরূপে ব্যবহৃত হয়, তাদের ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলা হয়। যেমন-কনকন, টগবগ, ঝলমল ইত্যাদি।
১০। সংযোগমূলক ধাতু কাকে বলে?
বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর, হ, দি, পা, কাট্, খা ইত্যাদি কয়েকটি মৌলিক ধাতুর সংযোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে সংযোগমূলক ধাতু বলে। যেমন-পড়তে বস, চা খা ইত্যাদি।
১১। যৌগিক ধাতু কাকে বলে?
‘ইয়া’ ও ‘ইতে’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া যখন সমাপিকা ক্রিয়ার ঠিক আগে বসে এবং ধাতু গঠন করে, সেই ধাতুকেই বলে যৌগিক ধাতু। সমাপিকা ক্রিয়া হিসেবে পড়, নে, থাক্, ফেল্, দি, লাগ, রাখ, যা ইত্যাদি ধাতুর ব্যবহারই বেশি। যেমন-করতে থাক্, দেখে পড়, বলে নে, খেতে দি ইত্যাদি।
১২। ধাতুবিভক্তি কাকে বলে?
কাল ও পুরুষ ভেদে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি পরে যুক্ত হয়ে ধাতুকে ক্রিয়াপদে পরিণত করে ও বাক্যে ব্যবহারযোগ্য করে সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে ধাতুবিভক্তি বলে।
১৩। ধাত্ববয়ব প্রত্যয় কাকে বলে?
ধাতুর সঙ্গে যে প্রত্যয় যোগ করে নতুন ধাতু তৈরি হয় তাকে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় বলে। যেমন-জ্ঞা+ সন্ = জিজ্ঞাস (ধাতু) ‘সম্’ ধাত্ববয়ব প্রত্যয়।
১৪। ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ও ধাতু বিভক্তির পার্থক্য কোথায়?
ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ধাতু উৎপন্ন করে কিন্তু ধাতুবিভক্তি ধাতুকে ক্রিয়াপদে পরিণত করে।
১৫। ‘আ’ কখন ‘ওয়া’ উচ্চরিত হয়?
একদল বা মৌলিক ধাতু স্বরান্ত হলে ‘আ’, ‘ওয়া’ উচ্চারিত হয়।
১৬। নিজন্ত ক্রিয়া কী?
‘নিচ্’ প্রত্যয়যোগে সংস্কৃত প্রযোজক ক্রিয়া তৈরি হলে, তাকে নিজন্ত ক্রিয়া বলা হয়।
১৭। অসমাপিকা ক্রিয়ার প্রাধান্য কোন্ ক্রিয়ায় আছে?
যৌগিক ক্রিয়ায় অসমাপিকা ক্রিয়ার প্রাধান্য আছে।
১৮। পঙ্গুধাতু কাকে বলে?
যেসব ক্রিয়াকে সব কালে ও ভাবে ব্যবহার করা চলে না তাদের বলা হয় পঙ্গুক্রিয়া বা অসম্পূর্ণ ক্রিয়া বা অপূর্ণরূপ ক্রিয়া। যেসব ধাতু থেকে এই ক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাদের পঙ্গু ধাতু বা অসম্পূর্ণ ধাতু বলে। ‘বট্’ ধাতুর বর্তমান ছাড়া অন্য কোনো কাল নেই। একা দেখি কুলবধূ কে বট আপনি বা আমি আজ চোর বটে। ‘যা’ ধাতুর অতীতকাল যেমন ‘গম্’ ধাতুর সাহায্যে হয় যায়, যাবে কিন্তু গেল, গেলাম।