কীভাবে ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই-এর মৃত্যুদণ্ড হয়? |
ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই-এর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে জিরন্ডিস্ট দলের নেতৃত্বে প্রায় ৮ হাজার সশস্ত্র মানুষের বিশাল মিছিল টুইলারিজ রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে (২০ জুন, ১৭৯২ খ্রি.)। এসময় প্রাশিয়ার সেনাধ্যক্ষ ডিউক অব ব্রান্সউইক এক ঘোষণার মাধ্যমে ফরাসি জাতিকে সতর্ক করেন-ফরাসি রাজপরিবারের কোনো ক্ষতি কেউ করলে তিনি তাদের চরম শাস্তি দেবেন।
ষোড়শ লুই-এর মৃত্যুদণ্ড
[1] রাজতন্ত্রের অবসানের দাবি:
ব্রান্সউইক ঘোষণার ফলে ফ্রান্সের বিপ্লবীরা সন্দেহ করে যে, রাজপরিবার বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দেশে বিপ্লবীদের ধ্বংস করতে চাইছে। ফলে উন্মত্ত জনতা ১০ আগস্ট (১৭৯২ খ্রি.) দ্বিতীয়বার রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে প্রায় ৮০০ রক্ষীকে হত্যা করে। আতঙ্কিত রাজপরিবার নিকটবর্তী আইনসভা কক্ষে আশ্রয় নিলে জনতা আইনসভা অভিযান করে রাজতন্ত্রের অবসানের দাবি জানায়।
[2] রাজার বিচার:
উন্মত্ত জনতার চাপে আইনসভা রাজাকে বরখাস্ত করে তাঁর বিচারের উদ্দেশ্যে টেম্পল দুর্গে বন্দি করে। রাজার বিচারকে কেন্দ্র করে জিরন্ডিস্ট ও জ্যাকোবিন দলের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। জিরন্ডিস্ট দল রাজার মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে গণভোটের ভিত্তিতে রাজার অন্য-কোনো শাস্তিদানের পক্ষপাতী ছিল। কিন্তু উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন দল রাজার মৃত্যুদণ্ডের জোরালো দাবি জানায়।
[3] মৃত্যুদণ্ড:
শেষপর্যন্ত জাতীয় সভা সামান্য ভোটের ব্যবধানে রাজার মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ জানুয়ারি গিলোটিনে রাজা ষোড়শ লুই-এর মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়। রাজার মৃত্যুদণ্ড ষোড়শ লুই-এর প্রাণদণ্ড ইউরোপকে স্তম্ভিত করে। ঐতিহাসিক হ্যাজেন বলেছেন, “সিংহাসনের তুলনায় রাজা ফাঁসির মঞ্চে বেশি মহান ছিলেন।”
উপসংহার:
ফরাসি রাজার মৃত্যুদণ্ড নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে রাজার ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে। অর্থাৎ গণনিরাপত্তার জন্য রাজার মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োজন ছিল।