পরিবহণের গুরুত্ব আলোচনা করো

পরিবহণের গুরুত্ব

পরিবহণের গুরুত্ব আলোচনা করো।
পরিবহণের গুরুত্ব আলোচনা করো।
ভারতের সার্বিক উন্নতিতে পরিবহণ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম –

কৃষির উন্নতি

ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। ভারতের অর্থনীতি কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদন ও সুষ্ঠু বণ্টনের ওপর নির্ভরশীল। উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষিক্ষেত্রে পৌঁছে দিতে এবং উৎপন্ন ফসল দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে, শিল্প কারখানায় ও বিদেশে রপ্তানি করতে সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ এমনকি আকাশপথের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

শিল্পোন্নতি

শিল্পোন্নতির অন্যতম শর্ত হল উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা। শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, শক্তিসম্পদ, শ্রমিক প্রভৃতি সরবরাহ এবং শিল্পজাত পণ্য বাজারে প্রেরণে পরিবহণ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। এমনকি ভারতের বহু শিল্পকেন্দ্র পরিবহণ ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে পরিবহণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ

বিভিন্ন খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ, মৎস্য সম্পদ আহরণ ও তার সুষ্ঠু বণ্টনে পরিবহণ ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন।

বাণিজ্যিক প্রসার

পরিবহণ ব্যবস্থা ছাড়া বাণিজ্য অসম্ভব। ভারতের অভ্যন্তরীণ তথা বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারে অর্থাৎ, বিভিন্ন দ্রব্যের আমদানি-রপ্তানিতে সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ ও আকাশপথের গুরুত্ব অপরিসীম।

বিপর্যয় মোকাবিলা

বিশাল দেশ ভারতবর্ষে বন্যা, খরা, ঝড়ের তাণ্ডব, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় লেগেই থাকে। এই সকল বিপর্যয়গ্রস্ত অঞ্চলগুলিতে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী দ্রুত পৌঁছে দিতে পরিবহণ ব্যবস্থার ভূমিকা অসামান্য।

প্রতিরক্ষা

ভারতের প্রতিরক্ষা বিষয়ে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার গুরুত্ব সর্বাধিক। বিশেষত উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অংশের দুর্গম অঞ্চলগুলিতে প্রতিরক্ষার কারণে সড়কপথ ও বিমানপথের উন্নতি ঘটেছে।

কর্মসংসথান

ভারতের মতো জনবহুল দেশে কর্মসংস্থানের বিশাল ক্ষেত্র হল পরিবহণ ব্যবস্থা। বিশেষত, ভারতের রেলপথ পরিবহণ অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস।

শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার

পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে যাতায়াতের মধ্য দিয়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তিবিদ্যা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রভৃতির পারস্পরিক আদানপ্রদান ঘটে। ফলে, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

জাতীয় আয় বৃদ্ধি

পরিবহণ সুবিধাদানের মাধ্যমে করসংগ্রহ, এবং পরিবহণের হেতু কৃষি, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংহতি বোধ

পরিবহণের ওপর নির্ভর করেই দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে এবং বিদেশে মানুষ ছুটে চলেছে। মানুষের এই যাতায়াতের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময় ঘটে। বহু ভাষাভাষী ও বহু ধর্মের বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতে এরূপ ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যবোধ ও আন্তর্জাতিক সংহতি গড়ে ওঠে।

পরিবহণ বলতে কী বোঝো? পরিবহণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি সম্পর্কে লেখো।

পরিবহণ বলতে কী বোঝো? পরিবহণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি সম্পর্কে লেখো।
পরিবহণ বলতে কী বোঝো? পরিবহণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি সম্পর্কে লেখো।

পরিবহণ:

যে পদ্ধতিতে স্থানান্তরযোগ্য দ্রব্য এবং যাত্রীকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়, তাকে পরিবহণ বলে। পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত রাস্তা, যানবাহন ও নিয়মকানুনকে একসঙ্গে পরিবহণ ব্যবস্থা বলে। ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে আধুনিক ভারতে বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যেমন–

A স্থলপথ (Roadways):

ভূপৃষ্ঠস্থ স্থলভাগকে কেন্দ্র করে যে পরিবহণ পথ গড়ে উঠেছে, তাকে স্থলপথ পরিবহণ বলে।

শ্রেণিবিভাগ:

স্থলপথে প্রধানত দু-ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। যেমন-
সড়ক পরিবহণ: স্থলপথে ট্রলি, ভ্যান, সাইকেল, টেম্পো, বাস, লরি, অটো, টোটো প্রভৃতি চলাচলের জন্য গড়ে ওঠা পরিবহণ ব্যবস্থা হল সড়ক পরিবহণ। স্বল্প দূরত্বে পরিবহণের ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে লাভজনক মাধ্যম। সড়কপথ (i) জাতীয়, (ii) রাজ্য, (iii) জেলা, (iv) গ্রাম্য ও (v) সীমান্ত প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত।
রেল পরিবহণ: স্থলভাগের যে নির্দিষ্ট পরিবহণ পথ ধরে ডিজেল ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনচালিত রেলগাড়ি চালানো হয়, তাকে রেল পরিবহণ বলে। মাঝারি দূরত্ব এবং অধিক পরিমাণ পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলপথ সবচেয়ে সুলভ মাধ্যম। প্রসঙ্গত, রেল পরিবহণের দুটি বিশেষ রূপ দেখা যায়। যথা- (ⅰ) ভূপৃষ্ঠস্থ পণ্য ও যাত্রীবাহী রেলপথ। (ii) ভূগর্ভস্থ যাত্রীবাহী মেট্রো রেলপথ।

B জলপথ (Waterways) :

সাগর, মহাসাগর, নদী, হ্রদ, খাল প্রভৃতি জলভাগকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পরিবহণ ব্যবস্থাকে জলপথ পরিবহণ বলে। জলপথগুলিতে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ প্রভৃতি চলাচল করে।

শ্রেণিবিভাগ:

জলপথকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
অভ্যন্তরীণ জলপথ: কোনো দেশের নদনদী ও খালপথকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ জলপথ গড়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক জলপথ : কোনো বহির্দেশীয় অংশে থাকা সাগর বা মহাসাগরকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক জলপথ গড়ে ওঠে।

C আকাশপথ (Airways):

বায়ুমণ্ডলীয় যে পথ ধরে বিভিন্ন উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন পরিবহণ যান চলাচল করে, তাকে আকাশপথ পরিবহণ বলে। আকাশপথে রকেট, বিমান, হেলিকপ্টার প্রভৃতি চলাচল করে। সবচেয়ে দ্রুতগামী পরিবহণ যানগুলি এই আকাশপথে চলাচল করে বলে অধিক দূরত্বে এই পথ খুবই উপযোগী।

শ্রেণিবিভাগ :

আকাশপথে পরিবহণ আবার দুটি ভাগে বিভক্ত –
অভ্যন্তরীণ আকাশপথ: যে-কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অভ্যন্তরীণ আকাশপথ অবস্থিত।
আন্তর্জাতিক আকাশপথ : সারা পৃথিবীব্যাপী বায়ুমণ্ডল জুড়ে আন্তর্জাতিক আকাশপথ অবস্থিত।

D নলপথ (Pipeline):

যে পথে নলকে ব্যবহার করে পার্থিব বিভিন্ন সম্পদের পরিবহণ করা হয়, তাকে নলপথ পরিবহণ বলে। এই নলপথকে ব্যবহার করে পানীয় জল, খনিজ তেল, স্বাভাবিক গ্যাস প্রভৃতি পরিবহণ করা হয়।

E রজ্জুপথ (Ropeways):

দুর্গম পাহাড়ি বা পার্বত্য অঞ্চলে দড়ি (Rope)-কে ব্যবহার করে যে পরিবহণপথ গড়ে ওঠে, তাকে রজ্জুপথ বলে। সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলের স্বল্প পরিসরে গভীর উপত্যকা পারাপারের জন্য এবং মালভূমিতে কম দূরত্বে খনিজ দ্রব্য প্রেরণের জন্য রজ্জুপথ বা Ropeway ব্যবহার করা হয়।

Leave a Comment