ভারতের অধিকাংশ লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র পূর্ব ও মধ্যভারতে গড়ে উঠেছে। যেমন- পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, বার্নপুর-কুলটি, ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর ও বোকারো, ওড়িশার রৌরকেলা, ছত্তিশগড়ের ভিলাই প্রভৃতি। পূর্ব ও মধ্যভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের এরূপ একদেশীভবনের প্রধান কারণগুলি হল–
আকরিক লোহার সহজলভ্যতা :
লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সর্বপ্রধান কাঁচামাল আকরিক লোহা ঝাড়খণ্ডের গুয়া, নোয়ামুন্ডি, বুদাবুরু, ওড়িশার গোরুমহিষাণী, সুলাইপাত, বাদামপাহাড়, বোনাই, ছত্তিশগড়ের বায়লাডিলা, দাল্লি-রাজহারা প্রভৃতি লৌহখনি অঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
কয়লার প্রাচুর্য:
আকরিক লোহা গলানোর জন্য প্রচুর তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। এই তাপশক্তির উৎস হল কয়লা। পূর্ব ভারতে ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া, বোকারো, গিরিডি, বিহারের ডালটনগঞ্জ, রামগড়, পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জ, ওড়িশার তালচের প্রভৃতি কয়লাখনি অঞ্চল থেকে প্রয়োজনীয় কয়লা পাওয়া যায়।
অন্যান্য কাঁচামালের পর্যাপ্ত জোগান :
এ ছাড়া লৌহ-ইস্পাত শিল্পে চুনাপাথর, ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার বীরমিত্রপুর, গাংপুর প্রভৃতি অঞ্চলের চুনাপাথর এবং কালাহান্ডি, কোরাপুট প্রভৃতি অঞ্চলের ম্যাঙ্গানিজ, পশ্চিমবঙ্গের জয়ন্তি ও ওড়িশার গাংপুরের ডলোমাইটের পর্যাপ্ত জোগান পূর্ব ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একদেশীভবন ঘটিয়েছে।
বিদ্যুৎশক্তির প্রাচুর্য:
পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, ফারাক্কা, ব্যান্ডেল, কোলাঘাট, ঝাড়খণ্ডের বোকারো, পত্রাতু এবং ওড়িশার তালচের প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পশ্চিমবঙ্গের ম্যাসাঞ্জোর, ঝাড়খণ্ডের পাঞ্চেত, মাইথন, তিলাইয়া এবং ওড়িশার হিরাকুঁদ প্রভৃতি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎশক্তি পাওয়ার সুবিধা পূর্ব ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একদেশিভবনে সহায়ক হয়েছে।
জলের জোগান:
লৌহ-ইস্পাত শিল্পে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। পূর্ব ভারতের দামোদর, সুবর্ণরেখা, খরকাই, ব্রাহ্মণী প্রভৃতি নদীগুলি থেকে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় জল সহজেই পাওয়া যায়।
শ্রমিকের প্রাচুর্য :
পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা প্রভৃতি পূর্ব ভারতীয় রাজ্যের সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের অন্যতম কারণ। উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং NH-2, 6, 23, 31, 33 প্রভৃতি জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমে গড়ে ওঠা উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা শিল্পের একদেশীভবনে বিশেষ সাহায্য করেছে।
বন্দরের সান্নিধ্য:
কলকাতা, হলদিয়া ও পারাদ্বীপ বন্দরের সাহায্যে শিল্পের প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি ও শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানির সুবিধা লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একদেশীভবনে সাহায্য করেছে।
চাহিদা ও বাজার:
কলকাতা শিল্পাঞ্চল, আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এবং রাঁচি-হাতিয়া শিল্পাঞ্চলে নানান ধাতব শিল্প ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ ঘটায় ইস্পাতের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
মূলধন :
পূর্ব ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একদেশীভবনের পিছনে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগান।