বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি বলতে কী বোঝায়

বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি বলতে কী বোঝায় – আজকের পর্বে বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি বলতে কী বোঝায় তা আলোচনা করা হল।

    বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি বলতে কী বোঝায়

    বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি বলতে কী বোঝায়
    বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি বলতে কী বোঝায়?

    ভূমিকা

    অটো-ফন বিসমার্ক (১৮১৫-৯৮) ছিলেন একজন সুশিক্ষিত, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন বাস্তুবাদী রাজনীতিবিদ = (Real Politik) ব্যক্তিগত ভাবে তিনি ছিলেন ঘোর রক্ষণশীল, অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী, আবেগপ্রবণ ও প্রচণ্ড ক্রোধী। তিনি ছিলেন রাজতন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি মনে করতেন যে লক্ষ ও উদ্দেশ্য মহৎ হলে নৈতিকতা কোনো প্রতিবন্ধক হতে পারে না। উদার জাতীয়তাবাদীদের কাজে লাগিয়ে জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন করতে তিনি যে নীতিটি প্রয়োগ করেছিলেন সেটি রক্ত ও লৌহ নীতি নামে পরিচিত।

    রক্ত ও লৌহ নীতি

    বিসমার্ক মনে করতেন জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন করতে হলে দরকার যুদ্ধ ও কঠোর শৃঙ্খলা। সে জন্য তিনি সমরসচিব ভনরুন ও সেনাপতি মল্টকে দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে প্রাশিয়ার বাহিনীকে ইউরোপের অন্যতম সেরা বাহিনীতে পরিণত করেন। প্রাশিয়ার আইন সভায় তিনি ঘোষণা করেন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বক্তৃতা বা ভোটের দ্বারা হবে না, তা করতে হবে রক্ত ও লৌহ নীতি দিয়ে।

    এই নীতির মূল কথা হল উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করতে হবে। বিসমার্ক মনে করতেন একমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমেই জার্মানির ঐক্য সম্ভব শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মাধ্যমেই সেই কাজ তিনি সম্পন্ন করেন।

    রক্ত ও লৌহ নীতির প্রয়োগ

    বিসমার্ক যুদ্ধের অনুকূল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ১৮৬৪ থেকে ১৮৭০ এই ছয় বছরের মধ্যে তিনটি যুদ্ধের সাহায্যে জার্মানির ঐক্য সম্পূর্ণ করেন।

    • প্রথম যুদ্ধটি ছিল অস্ট্রিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে ডেনমার্কের পরাজয় হলে গ্যাস্টিনের চুক্তির মাধ্যমে শ্লেজউইগ প্রাশিয়ার এবং হলস্টাইনে অস্ট্রিয়ার আধিপত্য স্বীকৃত হয়। 
    • দ্বিতীয় যুদ্ধটি ছিল অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে। স্যাডোয়ার যুদ্ধ (১৮৬৬)। এই যুদ্ধে অস্ট্রিয়া প্রাশিয়ার কাছে পরাজিত হয়। 
    • তৃতীয় যুদ্ধটি ছিল ফ্রান্সের বিরুদ্ধে স্যাডানের যুদ্ধ (১৮৭০)। এই যুদ্ধে বিসমার্কের কূটনৈতিক দক্ষতায় ফ্রান্স তথা নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে। বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতির মাধ্যমে জার্মান ঐক্যবদ্ধ জাতীয় রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রাশিয়ার রাজা ঐক্যবদ্ধ জার্মানির সম্রাট হিসেবে স্বীকৃত হন। জার্মানির চ্যান্সেলার হন বিসমার্ক।

    Leave a Comment