পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে অক্ষাংশ নির্ণয় পদ্ধতি আলোচনা করো

পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে অক্ষাংশ নির্ণয় পদ্ধতি আলোচনা করো
পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে অক্ষাংশ নির্ণয় পদ্ধতি আলোচনা করো

অক্ষাংশ নির্ণয়ের মূলনীতি: 

ভূগোেলকের কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ভূকেন্দ্র থেকে কৌণিক দূরত্ব বিচার করা হয়। বাস্তবে ভূকেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব হয় না বলে রাত্রিতে মেরু নক্ষত্র কিংবা দিনে মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতির সাহায্যেই অক্ষাংশ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

(ক) উত্তর গোলার্ধে ধ্রুবতারার সাহায্যে অক্ষাংশ নির্ণয় : 

উত্তর গোলার্ধে ধ্রুবতারা ঠিক মাথার উপর অর্থাৎ, নিরক্ষরেখা থেকে দিগন্তরেখায় দেখা যায়। প্রসঙ্গত, পৃথিবীর কোনো স্থানের দিগন্তরেখা থেকে ধ্রুবতারার উন্নতি কোণ ও সেই স্থানের অক্ষাংশ সর্বদা সমান হয়।
উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থানে একটি ছোটো ও একটি বড়ো খুঁটি এমনভাবে পুঁততে হবে যাতে ছোটো খুঁটি, বড়ো খুঁটি এবং ধ্রুবতারাকে একই সরলরেখায় দেখা যায়। এবার দুটি খুঁটির ব্যবধান ও ভূমিরেখা থেকে ধ্রুবতারার মধ্যেকার দূরত্বকোণ খাতায় এঁকে চাঁদার সাহায্যে মেপে নিলেই উত্তর গোলার্ধের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যাবে।

(খ) দক্ষিণ গোলার্ধে হ্যাডলি অকট্যান্ট নক্ষত্রের দ্বারা অক্ষাংশ নির্ণয় : 

উত্তর গোলার্ধের ধ্রুবতারার মতো দক্ষিণ গোলার্ধে হ্যাডলি অকট্যান্ট নক্ষত্রকেও কোনো স্থানে ঠিক মাথার উপরে দেখা যায়। যেহেতু, দক্ষিণ মেরু থেকে হ্যাডলি অকট্যান্ট নক্ষত্রকে একেবারে দিগন্তরেখায় (90°) দেখা যায়, তাই 0° অক্ষাংশ থেকে 90° দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধের মতো দুটি খুঁটি ও চাঁদার সাহায্য নিয়ে অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়।

(গ) সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ: 

‘সেক্সট্যান্ট’ কথার অর্থ হল ‘বৃত্তের ষষ্ঠাংশ’ বা 60°। এই যন্ত্রের সাহায্যে উত্তর বা দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত কোনো স্থানের সঙ্গে ধ্রুবতারা বা হ্যাডলির অকট্যান্ট নক্ষত্রের যে উন্নতি দেখা যায়, তাই হল ওই স্থানের অক্ষাংশ। 

(ঘ) সূর্যের সাহায্যে অক্ষাংশ নির্ণয় : 

দিনের বেলা মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতি দেখে ভূপৃষ্ঠের যে-কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়।  যে-কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয়ের সূত্রটি হল–
(90° – সেই স্থানের সেই দিনের সূর্যের উন্নতি) ± সেই দিনের বিষুব লম্ব = সেই স্থানের অক্ষাংশ।

(ঙ) আধুনিক GPS পদ্ধতিতে অক্ষাংশ নির্ণয় : 

কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠের কোনো স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয়ের মাধ্যমে সেই স্থানের অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতিকে GPS (Global Positioning System) বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 20000 কিমি উপরে 6টি কক্ষপথে ঘুরতে থাকা মোট 24টি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সহজেই ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।

Leave a Comment