সমভূমি কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার সমভূমি সৃষ্টির কারণ আলোচনা করো। |
সমভূমি:
সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে বা, 300 মিটারের কম উচ্চতাবিশিষ্ট প্রায় সমতল বা সমতল ভূভাগকে সমভূমি বলে। যেমন– ভারতের গঙ্গা নদী বিধৌত সমভূমি অঞ্চল, রাশিয়ার সাইবেরিয়ান সমভূমি।
বিভিন্ন প্রকার সমভূমি সৃষ্টির কারণ:
নিম্নলিখিত কারণে বিভিন্ন প্রকার সমভূমির সৃষ্টি হয়। যেমন –
• পলিগঠিত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নদী উপত্যকার দুপাশে বা মোহানায় পলি সঞ্চিত হয়ে এই সমভূমি গড়ে ওঠে। যেমন গাঙ্গেয় সমভূমি।
• বন্যাগঠিত সমভূমি বা প্লাবনভূমি সৃষ্টির কারণ: বর্ষাকালে বন্যার ফলে পলি সঞ্চিত হয়ে এই প্রকার সমভূমি সৃষ্টি করে। যেমন – ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
• বদ্বীপ সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নদীর মোহানায় অতিরিক্ত পলি সঞ্চিত হয়ে মাত্রাহীন ‘ব’ আকৃতির সমভূমি গড়ে ওঠে। যেমন – গঙ্গা নদীর মোহানায় সৃষ্ট বদ্বীপ সমভূমি।
• হ্রদ সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নদীবাহিত নুড়ি, বালি, কাদা, পলি হ্রদে সঞ্চিত হয়ে হ্রদ ভরাট হয়ে গেলে হ্রদ সমভূমি গঠিত হয়। যেমন -উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল।
• লোয়েস সমভূমি সৃষ্টির কারণ: বায়ুপ্রবাহ দ্বারা মরুভূমির বালি বহুদূরে উড়ে গিয়ে সঞ্চিত হয়ে এই সমভূমি গড়ে তোলে। যেমন – এশিয়ার গোবি মরুভূমির বালি হোয়াংহো নদী অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমি গড়ে তুলেছে।
• লাভা সমভূমি সৃষ্টির কারণ: অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পৃথিবীর ভিতরকার গলিত লাভা ফাটল দিয়ে বাইরে এসে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে লাভা সমভূমি সৃষ্টি করে। যেমন – দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর দিকের কিছু অংশ।
• হিমবাহ সমভূমি সৃষ্টির কারণ: হিমবাহের দ্বারা সঞ্চিত নুড়ি, কাঁকর জমে এই প্রকার সমভূমি সৃষ্টি হয়। যেমন – উত্তর আমেরিকার প্রেইরি সমভূমি।
• ক্ষয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নীচু মালভূমি বা পার্বত্য অঞ্চল বহু বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমপ্রায়ভূমির সৃষ্টি করে। যেমন ভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমির কোনো কোনো অংশ।
• ভূ-আন্দোলনজাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: (i) অনেক সময় ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূমিভাগ বসে গিয়ে অবনত সমভূমির সৃষ্টি করে। যেমন তুরানের সমভূমি। (ii) আবার ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূমিভাগ ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি করে। যেমন ইউরেশিয়ার স্টেপ সমভূমি।