মৃত্তিকাক্ষয় বলতে কী বোঝো? মৃত্তিকাক্ষয়ের কারণগুলি লেখো |
মৃত্তিকাক্ষয়:
বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন— জলপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির দ্বারা এবং মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে মাটির উপরের অংশ অসংবদ্ধ ও আলগা হয়ে অপসারিত হলে, তখন তাকে মৃত্তিকাক্ষয় বলে।
মৃত্তিকাক্ষয়ের কারণ:
মৃত্তিকাক্ষয়ের কারণগুলিকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা– (A) প্রাকৃতিক কারণ ও (B) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ।
(A) প্রাকৃতিক কারণ :
• জলপ্রবাহ:
তীব্র জলপ্রবাহের কারণে মৃত্তিকার উপরের স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ভূমির ঢাল বরাবর প্রবাহিত নদীর জলস্রোতের আঘাতে মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
• বায়ুপ্রবাহ
শুষ্ক ও আলগা মাটির পৃষ্ঠস্তরের উপর দিয়ে প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হলে মাটি সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
• হিমবাহ ও সমুদ্রতরঙ্গ:
পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে মাটি ব্যাপকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
• বৃষ্টিপাত :
উপর থেকে সবেগে নামতে থাকা বিভিন্ন আকৃতির বৃষ্টির ফোঁটা মাটিকে সজোরে আঘাত করে। ফলে, মাটির দানাদার গঠন ধ্বংস হয়, মাটি আলগা হয়ে যায় এবং সহজে ক্ষয় হয়।
• ভূমিঢাল:
যেসমস্ত অঞ্চলে ভূমির ঢাল সর্বাধিক সেখানকার মৃত্তিকা কণা দ্রুত অপসারিত হয়ে ভূমিক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে। এই কারণে, পার্বত্য অঞ্চলে বেশি ভূমিক্ষয় দেখা যায়।
(B) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
• অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষচ্ছেদন:
উদ্ভিদের শিকড় মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখে। গাছের পাতা বৃষ্টির আঘাত থেকে মাটিকে রক্ষা করে। কিন্তু, মানুষ নিজের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক হারে বৃক্ষচ্ছেদন করে চলেছে, ফলে মৃত্তিকাক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
• অবৈজ্ঞানিক কৃষিপদ্ধতি:
চাষের জমিতে লাঙল, ট্র্যাক্টর, হারভেস্টর প্রভৃতি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেশি হলে মৃত্তিকা ক্ষয় পায়। এ ছাড়া, স্থানান্তর কৃষিকাজের ফলে মৃত্তিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
• অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ
অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণের ফলে তৃণভূমির তৃণ নির্মূল হয়ে মাটি আলগা হয়ে পড়ে। এ ছাড়া, পশুদের পায়ের ক্ষুরের আঘাতে পৃষ্ঠস্তরের মাটি ব্যাপকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
• নির্মাণ কাজ:
রাস্তাঘাট ও সেতুনির্মাণ, ইটভাটা স্থাপন, বাঁধনির্মাণ, বাড়ি তৈরি, পুকুর, খাল, পরিখা খনন, পয়ঃপ্রণালী তৈরি, খনি খনন প্রভৃতি কাজের সময় যন্ত্রের আঘাতে মৃত্তিকা আলগা হয়ে পড়ে ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।