সুতরাং ইংরেজি চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।”— বক্তা কে? এরূপ উক্তির কারণ কী?

সুতরাং ইংরেজি চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।”—  বক্তা কে? এরূপ উক্তির কারণ কী
সুতরাং ইংরেজি চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।”—  বক্তা কে? এরূপ উক্তির কারণ কী?
‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধাংশে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী স্বয়ং তৎকালীন যুগে ইংরেজি ভাষাচর্চার গুরুত্ব বোঝাতে উদ্ধৃত দমন্তব্যটি করেন। 
সৈয়দ মুজতবা আলীর এই বক্তব্যের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। সেগুলি হল–
(১) যে-কোনো জাতির উন্নতির প্রধানতম শর্তই হল শিক্ষা। উচ্চাঙ্গ এবং আধুনিক জ্ঞানচর্চা ব্যতীত জাতির উন্নতি অসম্ভব এবং সেই কারণেই আধুনিক যুগের ‘দর্শন, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ইত্যাদি’ বিষয়ের জরুরি জ্ঞানচর্চার স্বার্থেই ইংরেজিচর্চা বন্ধ করার সময় তখনও আসেনি।
(২) বিজ্ঞানের আলোচনা বাংলা ভাষায় করতে গেলে এমনকি তার জন্যও প্রয়োজন ছিল ‘বিজ্ঞানের শব্দ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি বলেই দিয়েছিল যে, “… নবাগত রাসায়নিক বস্তুর ইংরেজি নামই বাংলা বানানে চলবে, যেমন অক্সিজেন, প্যারাডাইক্লোরোবেনজিন।” অথবা, “উদ্ভিদ ও প্রাণীর জাতিবাচক বা পরিচয়বাচক অধিকাংশ ইংরেজি (বা সার্বজাতিক international) নামও বাংলায় চালানো যেতে পারে….।” (“বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’, রাজশেখর বসু)। 
(৩) বিভিন্নরকম আধুনিক যন্ত্রপাতি (যেমন—রেলের ইঞ্জিন ইত্যাদি) চালানোর মতো কোনো সহায়ক গ্রন্থই বাংলায় না থাকায় নির্ভুলভাবেই প্রাবন্ধিক বুঝেছিলেন যে, ইংরেজি চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।
সুতরাং, জ্ঞানচর্চা এবং শিক্ষায় স্বনির্ভর হওয়ার আগেই যুক্তিহীন আবেগের ঝোঁকে আজই যদি আমরা ইংরেজি বর্জন করি তবে সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটাই যে অনিবার্য নিয়তি—এ বিষয়ে তিনি ছিলেন নিশ্চিত।

Leave a Comment