“বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তার পদাবলি কীর্তনে”— প্রাবন্ধিকের এমন মন্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে এই প্রসঙ্গে উল্লেখিত বাঙালি জাতির চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

“বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তার পদাবলি কীর্তনে।”— প্রাবন্ধিকের এমন মন্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে এই প্রসঙ্গে উল্লেখিত বাঙালি জাতির চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
“বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তার পদাবলি কীর্তনে।”— প্রাবন্ধিকের এমন মন্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে এই প্রসঙ্গে উল্লেখিত বাঙালি জাতির চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধাংশে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন স্বয়ং প্রাবন্ধিক।
মুজতবা আলী তাঁর প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, প্রাচীন ইরানে যেভাবে ফারসির জন্ম হয়েছিল প্রায় সেভাবেই এ দেশে কাশ্মীরি, উর্দু এবং সিন্ধি সাহিত্যের সৃষ্টি হয়। অথচ, ফারসি পারলেও ‘এ তিন ভাষা ফার্সির মতো নব নব সৃষ্টি দিয়ে ঐশ্বর্যশালী সাহিত্যসৃষ্টি করতে পারল না।’ অনুকৃতির দাসত্বে মৌলিক সৃষ্টির এই অভাব কার্যত তাদের স্বাধীন চিন্তাশক্তির দৈন্যকেই তুলে ধরে। বিপরীতে সংস্কৃত মহাকাব্য থেকে চরিত্র এবং বিষয়বস্তু গ্রহণ করেও পদাবলি ‘সাহিত্যের প্রাণ এবং দেহ’ হয়ে উঠেছে খাঁটি বাঙালির। মহাভারতের প্রখর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শ্রীকৃষ্ণকে অনায়াসে আটপৌরে এবং চিরপরিচিত ‘কানু’ করে নিয়েছে বাঙালি। শ্রীমতী রাধিকাও পরিণত হয়েছেন খাঁটি বাঙালি কন্যায়। ভাটিয়ালি গানে প্রেমিকের জন্য নায়িকার আকুতি, মনের মানুষের সন্ধানে ভক্ত বাউলের মতো ‘পাগলপারা’ ভালোবাসা অথবা, মুরশিদিয়ার গানে আশিকের ঐকান্তিক আত্মনিবেদন এবং পদাবলির শ্রীরাধার কৃষ্ণপ্রেম মিলে মিশে একই চরিত্র একই রূপে প্রকাশিত হয়েছে কবিদের সৃজন্ময়তায়।
মূল প্রবন্ধে লেখক বলেছিলেন, বাংলাদেশকে যখনই বাইরের কোনো শক্তি শাসন করতে চেষ্টা করেছে তখনই বাঙালি বিদ্রোহ করেছে এবং অধিকাংশক্ষেত্রেই এ জাতি আপন স্বাধীনতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ সাহিত্যেও এভাবেই অনুকৃতির দাসত্বের পরিবর্তে প্রকাশিত হয়েছে বাঙালির জাতীয় চরিত্রের স্বাধীন কল্পনাশক্তি এবং স্বাতন্ত্র্য প্রকাশের ক্ষমতা ও আত্মমর্যাদাবোধ।

Leave a Comment