সম্পদ কাকে বলে? সম্পদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো |
সম্পদ (Resource):
Encyclopedia of the Social Science অনুযায়ী “সম্পদ হল পরিবেশের সেইসব বিষয় যা মানুষের চাহিদা এবং সামাজিক লক্ষ্য মেটায় বা মেটাতে সাহায্য করে।” অর্থাৎ, সম্পদ হল মানুষের নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের উপায় মাত্র- এটি কোনোরকম জড় পদার্থ বা বস্তু নয়। বিখ্যাত জার্মান সম্পদ শাস্ত্রকার জিমারম্যানের দেওয়া সম্পদের সংজ্ঞাটি সবচেয়ে মধ্যে গ্রহণযোগ্য। তাঁর মতে, “যা মানুষের ব্যক্তিগত অভাব বা সামাজিক চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা কালের গণ্ডির কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে তাই সম্পদ।”
উদাহরণ: কয়লা বা খনিজ তেলকে আমরা তখনই সম্পদ বলব যখন এরা আমদের অভাব মেটাবে।
সম্পদের বৈশিষ্ট্য:
কোনো বস্তু বা অবস্তুকে তখনই সম্পদরূপে গণ্য করা হয় যখন তার মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য বা গুণগুলি বজায় থাকে।
• উপযোগিতা:
উপযোগিতা বলতে সম্পদের সেই গুণ বোঝায়, যার দ্বারা সম্পদ মানুষের অভাব মোচন করে। সম্পদের এই উপযোগিতা প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে বাড়তে থাকে। যেমন- কয়লা একসময় শুধু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হত কিন্তু বর্তমানে কয়লা থেকে নানান উপজাত দ্রব্য তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ, কয়লার উপযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
• কার্যকারিতা:
সম্পদের কার্যকারিতা অর্থাৎ, কাজ করার ক্ষমতা থাকা একান্ত প্রয়োজন। যেমন– জল তৃষ্ণা মেটায়, পরিবহণের মাধ্যম কাজ করে, সেচের কাজে, বিদ্যুৎ তৈরিতে, শিল্পে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, জল হল সম্পদ।
• প্রয়োগযোগ্যতা:
যে বস্তুর ব্যবহার যত বেশি সেই বস্তু মানুষের কাজে তত বেশি প্রয়োগ হয়। যেমন- কয়লার তুলনায় কয়লা থেকে উৎপন্ন তাপবিদ্যুতের প্রয়োগযোগ্যতা বেশি।
• গ্রহণযোগ্যতা:
কেবলমাত্র সামাজিক ও ধর্মীয় বাধানিষেধ ছাড়া সম্পদ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য উপাদান। যেমন- গোমাংস সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় কিন্তু খাদ্যশস্য রূপে ধান, গম প্রায় সর্বত্র গ্রহণযোগ্য।
• সর্বজনীনতা:
সম্পদের নিজস্ব গুণাবলির জন্য এর ব্যাপক ও সর্বজনীন চাহিদা আছে। যেমন– জল, আলো, বাতাস প্রত্যেকের কাছেই আবশ্যিক।
• ক্ষয়শীলতা:
গচ্ছিত সম্পদগুলি ব্যবহারের ফলে তার পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। যেমন- কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতি।
• সীমাবদ্ধতা:
প্রবহমান সম্পদগুলি অফুরন্ত মনে হলেও দীর্ঘকালের বিচারে এরা সীমাবদ্ধ। যেমন– জল, বায়ু অতিরিক্ত ব্যবহারে দুষিত হলে তার কার্যকারিতা হ্রাস পাবে।
• সুগমতা
সম্পদের ক্ষেত্রে সুগমতা বলতে সহজে সম্পদ আহরণকে বোঝায়। যেমন হিমালয়ের খনিজ পদার্থের তুলনায় ছোটোনাগপুর মালভূমির খনিজ পদার্থের সুগমতা অনেক বেশি।
• পরিবেশমিত্রতা
সম্পদের পরিবেশমিত্রতা বলতে পরিবেশকে কোনো ক্ষতি না করার ক্ষমতাকে বোঝায়। যেমন– সৌরশক্তি। জলবিদ্যুৎশক্তি, বায়ুশক্তি প্রভৃতি।
• পরিবর্তনশীলতা:
সংস্কৃতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে স্থান ও কাল ভেদে সম্পদের কার্যকারিতার পরিবর্তন ঘটে। যেমন- কাগজশিল্পে আখের ছিবড়ের ব্যবহার।
• স্পর্শযোগ্যতা:
সম্পদের যেমন স্পর্শযোগ্য বস্তুগত রূপ আছে। তেমনই অবস্তুগত রূপও আছে যা স্পর্শযোগ্য নয়। যেমন- কয়লা বস্তুগত সম্পদ কিন্তু, মানুষের শিক্ষা, জ্ঞান প্রভৃতি অবস্তুগত সম্পদ।
• সংরক্ষণ ক্ষমতা:
বসুন্ধরা সম্মেলনের (1992) সিদ্ধান্ত অনুসারে সম্পদ জীবমণ্ডলকে সংরক্ষণ করে। অর্থাৎ, জীবমণ্ডল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মানুষ যে নিয়মনীতি গ্রহণ করে তা হল সম্পদ।
• একমুখী ও বহুমুখীতা
সম্পদের উপযোগিতা একমুখী ও বহুমুখী হতে পারে। যেমন- খনিজ তেল কেবল জ্বালানির কাজে লাগানো যায় আবার এর থেকে বহু উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়।
• অপ্রচলন:
সংস্কৃতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কোনো কোনো সম্পদ ধীরে ধীরে অপ্রচলিত হয়ে পড়তে থাকে। যেমন- ইস্পাত তৈরিতে কাঠকয়লার ব্যবহার, পাটজাত সামগ্রী প্রভৃতি।