ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলা হয় কেন

ফ্রান্সকে 'ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর' বলা হয় কেন
ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলা হয় কেন

ভূমিকা: 

অষ্টাদশ শতাব্দীর ফ্রান্সে অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং ভ্রান্ত। সমাজে করের বৈষম্য, রাজপরিবারের অতিরিক্ত অর্থব্যয়, যুদ্ধনীতির অযৌক্তিকতা ইত্যাদি কারণে সে দেশের রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। এর ফলে ব্যাবসাবাণিজ্য সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্র থেকেও সঠিক অর্থ রাজকোশে জমা পড়ত না। এইসব কারণবশত প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ সেই সময়ের ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলেছেন।

ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলার কারণ:

① কর প্রদানে বৈষম্য: 

প্রাক্-ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সে প্রথম ও দ্বিতীয় সম্প্রদায় ছিল দেশের মোট সম্পদের 95 শতাংশের মালিক। অথচ এই দুই সম্প্রদায় অর্থাৎ যাজক ও অভিজাতদের কোনো কর দিতে হত না। অন্যদিকে দেশের মোট 5 শতাংশ সম্পদের অধিকারী তৃতীয় সম্প্রদায়ের জনগণকে রাষ্ট্রের প্রায় সমগ্র করই দিতে হত। কর প্রদানের এই বৈষম্য ভ্রান্ত অর্থনীতিরই প্রমাণ দেয়।

② রাজপরিবারের অত্যধিক অর্থব্যয়: 

দেশের অর্থনীতি যখন সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না তখন রাজাদেরই এই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে হয়। কিন্তু ফরাসি বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সে চতুর্দশ থেকে ষোড়শ লুই পর্যন্ত সম্রাটদের অযোগ্যতায় সেটা সম্ভব হয়নি। দেশের আর্থিক সংকটের সময়ও রাজপরিবারের সদস্যরা অত্যধিক অর্থব্যয়ে মেতে ছিলেন।

③ যুদ্ধনীতির অযৌক্তিকতা: 

চতুর্দশ লুই এবং পঞ্চদশ লুই-এর আমলে মোট চারটি যুদ্ধে ফ্রান্স অংশ নিয়েছিল। এই চারটি যুদ্ধে যোগদানের ফলে ফ্রান্সের প্রচুর অর্থব্যয় হয়েছিল। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন না করে যুদ্ধে প্রচুর অর্থব্যয় এক্ষেত্রে অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়।

④ দেশ শাসনে ব্যয় বৃদ্ধি: 

প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে মুদ্রাস্ফীতির কারণে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া রাজাদের জনসেবা, জনহিতকর কাজের জন্যও খরচ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দেশ শাসনের ক্ষেত্রেও বিশেষত প্রশাসনিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্রান্সের আর্থিক সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

⑤ রাজকোশে সংকট : 

রাজপরিবারের বিলাসব্যসন-জনিত ব্যয়, দেশ শাসনে বা যুদ্ধে খরচের কারণে বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সের রাজকোশে সংকট দেখা দেয়। এই সময় প্রয়োজন ছিল আর্থিক সমস্যাসমাধানে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ষোড়শ লুই-এর সময়ে তুর্গো, নেকার, ক্যালোন প্রমুখ অর্থমন্ত্রী সেই কাজটি সঠিকভাবে না করায় রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে।

⑥ অর্থনৈতিক সংকট : 

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদির ফলে প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শস্যহানি ঘটলে এই সংকট আরও তীব্র হয়।

মূল্যায়ন : 

উক্ত কারণগুলির ফলে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সের অর্থনীতিতে সংকট দেখা দেয়। কিন্তু সেই সময়ের ফরাসি শাসকরা এই সংকটমোচনের চেষ্টায় খুব একটা প্রয়াস দেখাননি। তাই আলোচ্য সময়ে ফ্রান্সকে অ্যাডাম স্মিথ সঠিকভাবেই ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলেছেন।

Leave a Comment