একদা বহুখণ্ডে বিভক্ত ইটালিকে বলা হত ভৌগোলিক সংজ্ঞার (Geographical expres- sion) দেশ। নেপোলিয়ান সমগ্র ইটালি জয় করে সর্বপ্রথম সেখানে একটি ঐক্যবদ্ধ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। ফরাসি বিপ্লবপ্রসূত ভাবধারা এবং নেপোলিয়ান প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থা ইটালিতে জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি করে। তবে ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত ন্যায্য অধিকার নীতি এই নবজাগ্রত জাতীয়তাবাদী চেতনার মূলে কুঠারাঘাত করে। ইটালিকে 5 টি (মতান্তরে ৭ টি) ভাগে ভাগ করা হয়। ফলে ইটালির ঐক্যের পথে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
ইটালির ঐক্যের পথে বাধা:
① বৈদেশিক শাসন:
পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া রাজ্যটি ছাড়া ইটালির প্রায় সকল রাজ্যই ছিল বিদেশি শক্তির শাসনাধীন। বৈদেশিক শক্তির শাসনাধীন হওয়ায় রাজ্যগুলি রাষ্ট্রীয় ঐক্য নিয়ে উৎসাহী ছিল না।
② পোপের রাজ্যের উপস্থিতি:
মধ্য ইটালির রোম ছিল পোপের রাজ্য। ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী সকল রাষ্ট্র পোপকে শ্রদ্ধার চোখে দেখত। তাই খ্রিস্টান জগতের ধর্মগুরু পোপের উচ্ছেদ ঘটিয়ে ইটালির ঐক্যসাধন করা সম্ভব ছিল না।
③ প্রতিক্রিয়াশীল শাসনব্যবস্থা:
ভিয়েনা সম্মেলনের মুখ্য নিয়ন্ত্রক মেটারনিক ইটালির বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিক্রিয়াশীল শাসনব্যবস্থা চালু করেন। এই প্রতিক্রিয়াশীল শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রের ঐক্যের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
④ অস্ট্রিয়ার আধিপত্য :
ভিয়েনা চুক্তির দ্বারা ইটালির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অস্ট্রিয়ার আধিপত্য স্থাপন করা হয়। ঐতিহাসিক হ্যাডেন ও লিপসন ইটালির ঐক্যের প্রধান অন্তরায় হিসেবে অস্ট্রিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আধিপত্যকে দায়ী করেছেন।
⑤ মেটারনিকের কঠোর দমন নীতি :
ইতালীয়রা স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানালে মেটারনিক কঠোর দমন নীতি প্রয়োগ করে তাদের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দেন।
⑥ জাতীয় চেতনার অভাব:
সর্বোপরি সমগ্র ইটালিতে জাতীয় চেতনার অভাব লক্ষ করা যায়। সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তায় মগ্ন ইতালীয়রা রাষ্ট্রীয় ঐক্যের স্বার্থে আঞ্চলিক স্বার্থত্যাগ করতে রাজি ছিল না।