ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের (1848 খ্রিস্টাব্দ) পতনের কারণগুলি আলোচনা করো |
ভূমিকা :
একাধিক কারণে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের পতন ঘটেছিল। এই পার্লামেন্টের দ্বারা জার্মানির গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক উপায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের পতনের কারণসমূহ:
① গঠনতান্ত্রিক বৈধ অধিকারহীনতা :
ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের কোনো বৈধ অধিকার ছিল না। এটি ছিল একটি বিপ্লবী পার্লামেন্ট। এইজন্য জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের সরকারগুলি এই পার্লামেন্টের প্রস্তাবকে মানতে বাধ্য ছিল না।
② রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অস্বচ্ছতা :
জার্মানির রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্ক কী হবে এ সম্পর্কে ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের সংবিধান পরিষ্কার ছিল না। জার্মানির চারটি বড়ো রাজ্য যথা-ব্যাভেরিয়া, স্যাক্সনি, উটেনবার্গ ও হ্যানোভারকে ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্ট স্বীকার করেনি।
③ জার্মান জাতিগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ:
জার্মান জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ ছিল। প্রজাতন্ত্রীরা সংখ্যালঘু হলেও সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে। মহান জার্মান জাতিগোষ্ঠী অস্ট্রিয়াতেই ঐক্যবদ্ধ জার্মানির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই অস্ট্রিয়া ফ্রাঙ্কফুর্ট সংবিধান মেনে জার্মানি ত্যাগ করতে রাজি ছিল না। সুতরাং, প্রাশিয়ার রাজা ফ্রাঙ্কফুর্ট সংবিধান গ্রহণ করলে তাকে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ঝুঁকি নিতে হত। প্রাশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডারিক উইলিয়ামের সেই সাহস ছিল না।
④ চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরোধিতা:
র্যাডিক্যাল বা চরমপন্থী গোষ্ঠী সামাজিক বিপ্লব চাইত। তাদের মত গৃহীত না হওয়ায় তারা ফ্রাঙ্কফুর্ট সভার প্রতি আস্থা হারায়।
⑤ শ্রমিক শ্রেণির অনুপস্থিতি :
ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার মতো কোনো ক্ষমতা ফ্রাঙ্কফুর্ট সভার ছিল না। তা ছাড়া পার্লামেন্টের অধীনে কোনো সৈন্য বা পুলিশ ছিল না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালবিলম্ব করায় পার্লামেন্ট সম্পর্কে জনসাধারণের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। এই পার্লামেন্টে শ্রমিকদের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় শ্রমিকশ্রেণির মঙ্গলে পার্লামেন্ট কোনো আইন প্রণয়ন করেনি। কেম্ব্রিজ ঐতিহাসিকদের মতে, শ্রমিকশ্রেণির সহযোগিতা না পাওয়ার ফলে এই সভার মস্তিষ্ক থাকলেও পেশি ছিল না। তাই প্রয়োজনের সময় রাজশক্তির বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট বলপ্রয়োগ করতে পারেনি। এই সকল কারণে ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্ট তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারেনি।
উপসংহার:
ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্ট ব্যর্থ হলেও এর কার্যাবলি এই কথা প্রমাণ করে যে, জার্মানির ঐক্য স্থাপন করা সম্ভব এবং প্রাশিয়ার নেতৃত্বেই তা সম্ভব। এই পার্লামেন্টের কার্যাবলির জন্যই জার্মানি ও প্রাশিয়ার মধ্যে ভাবগত ঐক্যবোধ গড়ে ওঠে।