প্যারি কমিউন কী? সংক্ষেপে ইংল্যান্ড ও ইউরোপ মহাদেশের অন্যত্র শিল্পবিপ্লবের তুলনা করো

প্যারি কমিউন কী? সংক্ষেপে ইংল্যান্ড ও ইউরোপ মহাদেশের অন্যত্র শিল্পবিপ্লবের তুলনা করো
প্যারি কমিউন কী? সংক্ষেপে ইংল্যান্ড ও ইউরোপ মহাদেশের অন্যত্র শিল্পবিপ্লবের তুলনা করো।

প্যারি কমিউন: 

‘প্যারি কমিউন’ একটি সমাজতন্ত্রী ব্যবস্থার নাম। 1870-1871 খিস্টাব্দে প্রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের যুদ্ধে তৎকালীন ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ান পরাজিত ও বন্দি হন। ফলে রাজতন্ত্রের অবসানকল্পে ফ্রান্সের প্রাচীন রাজধানী ভার্সাইতে একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হয়। এই সরকারের সঙ্গে প্রাশিয়ার যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সেটি ছিল ফ্রান্সের পক্ষে অপমানজনক। ফলে বিপ্লবী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রী ও পুরোনো জ্যাকোবিন নেতাগণের উদ্যোগে প্যারি কমিউন নামক সমাজতন্ত্রী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ফ্রান্সের প্রজাতন্ত্রী সরকারের সঙ্গে এই দলের গৃহবিবাদ শুরু হলে ওই সরকারের সৈন্যবাহিনী প্যারি কমিউনের বিদ্রোহকে নৃশংসভাবে দমন করতে সক্ষম হয়। এই বিদ্রোহটি পরবর্তীকালে মার্কসবাদী ও সমাজতন্ত্রী চেতনার এক উজ্জ্বল আদর্শরূপে পরিগণিত হয়।

ইংল্যান্ড ও ইউরোপ মহাদেশের অন্যত্র শিল্পবিপ্লবের তুলনা : 

আমরা জানি, শিল্পবিপ্লব প্রথম ঘটেছিল ইংল্যান্ডে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ব্রিটেনের এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি কিন্তু সাফল্য পায় 1848 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। ইউরোপীয় মহাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায় ব্রিটেনের যন্ত্রভিত্তিক শিল্পোন্নয়নের প্রভাব ইউরোপ মহাদেশকেও স্পর্শ করে। ওই মহাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার পর 1830 খ্রিস্টাব্দে শিল্পবিপ্লবের ফলে আর্থসামাজিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বেলজিয়াম, জার্মানি ও অস্ট্রিয়াতে শিল্পোন্নতি ঘটে। 1830-1848 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ফ্রান্সেও শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠে। এর আগে 1799 খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম ককরিল নামক এক ইংরেজ আবিষ্কারক বেলজিয়ামে প্রথম পশম বোনার কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 1871 খ্রিস্টাব্দে এক ইংরেজ লৌহ বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সে ধাতু ও যুদ্ধের উপকরণ উৎপাদনের এক বিশাল কারখানা নির্মাণ করেছিলেন।

তুলনামূলকভাবে দেখতে গেলে ইংল্যান্ডের সামনে শিল্পকে উন্নতমানের করে গড়ে তোলার কোনোরকম আদর্শ ছিল না, সে ছিল পথপ্রদর্শক। কিন্তু ইউরোপ মহাদেশের ফ্রান্স, রাশিয়া, বেলজিয়াম ইত্যাদির সামনে ইংল্যান্ড ছিল আদর্শস্বরূপ। ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, আর ইউরোপ মহাদেশের অন্যত্র শিল্পায়ন ছিল পরিকল্পিত। ইংল্যান্ডের শিল্পায়নে সরকারি ভূমিকা ছিল খুব অল্প, অপরদিকে ইউরোপ মহাদেশের অন্যান্য দেশের সরকার পুঁজি বিনিয়োগ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল।

Leave a Comment