প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে কীভাবে ‘ত্রিশক্তি চুক্তি’ (Triple Alliance) এবং ‘ত্রিশক্তি আঁতাত’ (Triple Entente) গড়ে উঠেছিল |
ভূমিকা:
1914 খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তার আগে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্র দুটি পরস্পর বিরোধী শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। 1882 খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, ইটালি এবং অস্ট্রিয়ার মধ্যে ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ (Triple Alliance) স্বাক্ষরিত হয়। এর পরবর্তী সময়ে 1907 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং রাশিয়ার মধ্যে গঠিত হয় ‘ত্রিশক্তি আঁতাত’ (Triple Entente) |
ত্রিশক্তি মৈত্রী (Triple Alliance) গড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়:
① ড্রেইকাইজারবুন্ড গঠন :
জার্মানিকে শক্তিশালী এবং প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে ইউরোপীয় রাজনীতিতে নিঃসঙ্গ করে রাখার জন্য বিসমার্ক উদ্যোগ নেন। এই কারণে তিনি 1873 খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে ‘তিন সম্রাটের চুক্তি’ বা ড্রেইকাইজারবুন্ড গঠন করেন।
② অস্ট্রিয়ার সঙ্গে দ্বিশক্তি চুক্তি:
1878 খ্রিস্টাব্দে বার্লিন কংগ্রেসে জার্মানির বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ার প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে রাশিয়া ড্রেইকাইজারবুন্ড ত্যাগ দেয়। ফলে অস্ট্রিয়া ও জার্মানির মধ্যে 1879 খ্রিস্টাব্দে দ্বিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
③ ড্রেইকাইজারবুন্ডানিস গঠন:
ফ্রান্সের সঙ্গে রাশিয়া যাতে জোট বাঁধতে না পারে সেই জন্য বিসমার্ক 1881 খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে ‘তিন সম্রাটের লিগ’ বা ড্রেইকাইজারবুন্ডানিস গঠন করেন।
④ ত্রিশক্তি মৈত্রী (Triple Alliance) :
বিসমার্কের উদ্যোগে 1882 খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জার্মানি, ইটালি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ (Triple Alliance) স্বাক্ষরিত হয়। পরে রোমানিয়া এবং তুরস্কও এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
ত্রিশক্তি আঁতাত (Triple Entente) গড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়:
① জার্মান-রুশ বিরোধিতা:
1887 খ্রিস্টাব্দে জার্মানির প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক রাশিয়ার সঙ্গে রি-ইনশিয়োরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এর মাত্র তিন বছর পর জার্মানির কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম এই চুক্তি বাতিল করেন। এতে জার্মানির প্রতি রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়।
② ফ্রান্স-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তি:
জার্মানির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ রাশিয়া এবং ফ্রান্স পরস্পরের কাছে আসতে শুরু করে। 1893 খ্রিস্টাব্দে’ তাদের মধ্যে প্রথমে একটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর পরের বছরই এই দুই রাষ্ট্র পরস্পর একটি মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
③ ফ্রান্স ও রাশিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের চুক্তি:
এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ড সমস্ত বিরোধ ভুলে ফ্রান্স ও রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে। ফলস্বরূপ 1905 খ্রিস্টাব্দে প্রথমে ‘ইঙ্গ-ফরাসি’ এবং 1907 খ্রিস্টাব্দে ‘ইঙ্গ-রুশ’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
④ ত্রিশক্তি আঁতাত:
ফ্রান্স এবং রাশিয়ার সঙ্গে দুটি চুক্তি করার ফলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া পরস্পরের খুব কাছে চলে আসে। এমন অবস্থায় এই তিনটি দেশের মধ্যে ‘ত্রিশক্তি আঁতাত’ (Triple Entente) গঠিত হয়।
মূল্যায়ন:
ত্রিশক্তি মৈত্রী এবং ত্রিশক্তি আঁতাত গঠনের ফলে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোেপ প্রকৃতপক্ষে দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই দুই বিরোধী শিবিরের পারস্পরিক শক্তিপ্রদর্শনের কারণেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে।