ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলি আলোচনা করো

ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলি আলোচনা করো
ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলি আলোচনা করো

ভূমিকা: 

1919 খ্রিস্টাব্দের 18 জুন জার্মানির সঙ্গে মিত্রপক্ষের ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। ভার্সাই রাজপ্রাসাদে এই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। মিত্রপক্ষবর্গ জার্মানিকে ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করেছিল। 15টি অধ্যায়ে বিভক্ত 439টি ধারা নিয়ে ভার্সাই সন্ধি রচিত হয়েছিল। বিশালাকার এই সন্ধিপত্রকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-① ভৌগোলিক শর্তাবলি, ② ঔপনিবেশিক শর্তাবলি, ③ সামরিক শর্তাবলি ও ④ অর্থনৈতিক শর্তাবলি।

① ভৌগোলিক শর্তাবলি: 

ভার্সাই সন্ধির শর্তানুসারে জার্মানিকে ইউরোপের বহু অঞ্চল হারাতে হয়েছিল। জার্মানি [i] ফ্রান্সকে আলসাস-লোরেন, [ii] বেলজিয়ামকে ইউপেন, ম্যালমেডি ও মরিসনেট। [iii] পোল্যান্ডকে পোজেন ও পশ্চিম প্রাশিয়ার অধিকাংশ দিতে বাধ্য হয়। পরে উত্তর সাইলেশিয়াও পোল্যান্ডকে দেওয়া হয়। [iv] ডানজিগ ও মেসেল বন্দর জার্মানির হস্তচ্যুত হয়। [v] জার্মানির খনি সমৃদ্ধ সার অঞ্চল 15 বছরের জন্য ফ্রান্সকে ছেড়ে দিতে হয়। [vi] উত্তর শ্লেজউইগ ডেনমার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

② ঔপনিবেশিক শর্তাবলি: 

আফ্রিকা ও চিনে জার্মানির যেসব উপনিবেশ ছিল সেগুলি লিগ অফ নেশনস-এর হাতে তুলে দেওয়া হলে লিগ ম্যান্ডেট হিসেবে সেগুলিকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের হাতে তুলে দেয়।

③ সামরিক শর্তাবলি: 

ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে সামরিক দিক দিয়ে পরাজিত জার্মানিকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র করা হয়। যেমন-[i] মিত্রপক্ষ জার্মানিকে যুদ্ধপরাধী সাব্যস্ত করে তার সমস্ত সেনা সংগঠন ভেঙে দেয়। [ii] জার্মানির সৈন্য সংখ্যা হ্রাস করে এক লক্ষে নামিয়ে আনা হয়। [iii] বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়। [iv] জার্মানির স্থল, জল ও বিমানবাহিনী ভেঙে দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে এই বাহিনী গঠন নিষিদ্ধ করা হয়। [v] জার্মানির যুদ্ধাস্ত্র, যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধ বিমান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয় এবং যুদ্ধজাহাজগুলি ইংল্যান্ডকে দিয়ে দেওয়া হয়। [vi] হেলিগোল্যান্ডে অবস্থিত জার্মান দুর্গগুলিকে ভেঙে ফেলা হয়। [vii] রাইন নদীর পূর্ব তীরে 30 মাইল বিস্তৃত এলাকা থেকে জার্মান সৈন্য সরিয়ে দেওয়া হয় ও রাইন অঞ্চলকে অসামরিক এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়।

④ অর্থনৈতিক শর্তাবলি: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানির ওপর সর্বাপেক্ষা কঠোর আঘাত এসেছিল অর্থনৈতিক দিক থেকে। যেমন- [i] জার্মানিকে যুদ্ধোপরাধী সাব্যস্ত করে তার ওপর প্রায় 660 কোটি পাউন্ডের ক্ষতিপূরণ চাপিয়ে দেওয়া হয়। [ii] ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানির কয়লাখনি সমৃদ্ধ সার অঞ্চল 15 বছরের জন্য ফ্রান্সকে দেওয়া হয়। [iii] ইটালি ও বেলজিয়ামকে 10 বছরের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়। [iv] ঠিক হয় মিত্রপক্ষকে জার্মানি চাহিদা মতো রেলইঞ্জিন ও মোটরগাড়ি সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। [v] রাইন নদীটিকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। [vi] জার্মানির বাণিজ্য জাহাজগুলি ফ্রান্সকে দিয়ে দেওয়া হয়। [vii] অন্যান্য দেশে জার্মানির বিশেষ বাণিজ্যিক অধিকার ত্যাগ করতে হয়। [viii] এ ছাড়া আরও বিভিন্ন রকমের আর্থিক শর্তাদি আরোপ করে জার্মানির অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে রোধ করা হয়।

⑤ রাজনৈতিক শর্তাবলি: 

যুদ্ধোপরাধী হিসেবে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ও তার অনুগত রাজকর্মচারীদের বিচার করা এবং বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য লিগ অফ নেশনসের মতো আন্তর্জাতিক একটি সংগঠন গড়ে তোলা। যুদ্ধোপরাধী হিসেবে বিচারের জন্য কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ও অন্যান্য কয়েক জনকে মিত্রপক্ষের কাছে সমর্থন করতে বলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম হল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ায় তাঁর বিচার সম্ভব হয়নি।

FAQ

১ প্রশ্নঃ ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় কত সালে?

২৮ জুন, ১৯১৯ সালে।

২ প্রশ্নঃ ভার্সাই সন্ধির দলিলে কয়টি অধ্যায় ছিল?

অধ্যায় ছিল ১৫টি এবং ধারা ৪৪০টি।

৩ প্রশ্নঃ ভার্সাই সন্ধির মূল কারণ কি ছিল?

মূলত যুদ্ধের জন্য জার্মানিকে দায়ী করে, দেশটিকে নিরস্ত্র করতে বাধ্য করে এবং উদার অর্থ প্রদান করে।

Leave a Comment