|
ইটালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান কীভাবে হল? |
ভূমিকা :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইটালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান ছিল অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। মানুষের হতাশা, জটিল ও জরুরি সমস্যা সমাধানে প্রচলিত শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের অনাস্থা ও অবিশ্বাস ফ্যাসিবাদের উত্থানের পথ প্রস্তুত করে। নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে।
ইটালিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থানের কারণসমূহ:
① প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইটালি :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বেকারত্ব ইটালিতে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি সমস্যার সমাধানে তৎকালীন গণতান্ত্রিক সরকার ব্যর্থ হয়। জনগণ এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
② বৈদেশিক নীতির ব্যর্থতা:
বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রেও ইটালি ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। নতুন রাজ্য লাভের আশায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করলেও প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ইটালির বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। উপরন্তু অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলের কিউম বন্দর ও আলবানিয়া দখলে মিত্রপক্ষ ইটালিকে নিরস্ত করলে ইটালি অসন্তুষ্ট ও অতৃপ্ত জাতিতে পরিণত হয়।
③ ভার্সাই সন্ধিতে অপ্রাপ্তিজনিত হতাশা:
ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরের সময় অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলে একাধিপত্য বিস্তারের জন্য ইটালি ট্রিয়েস্ট, ট্রেনটিনো ও ডালমাসিয়া দাবি করলেও তা উপেক্ষিত হয় এবং উক্ত জায়গাগুলি যুগোশ্লাভিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তা ছাড়া জার্মান উপনিবেশগুলি ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ায় ও উত্তর আফ্রিকায় স্থিতাবস্থা রক্ষা করা হলে ইটালি নিজেকে চরমভাবে বঞ্চিত মনে করে। এই বঞ্চনা জনিত হতাশা ও ক্ষোভ ইটালিতে উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটায়।
④ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির নেতিবাচক নীতিঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করার জন্য উদারতন্ত্রী, দলকে প্রধান বিরোধী দল ক্যাথোলিক ও সমাজতান্ত্রিকরা নানাভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক আক্রমণাত্মক মনোভাব দেশবাসীকে হতাশাগ্রস্ত করে তোলে।
⑤ উদারতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার মতো ব্যবস্থা গ্রহণে উদারতান্ত্রিক সরকার ব্যর্থ হলে জনগণ একনায়ক- তন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ে।
⑥ বুর্জোয়া শ্রেণির হতাশা :
ইটালির শিল্পপতি ও পেটিবুর্জোয়া শ্রেণির অপদার্থ উদারপন্থী সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য ফ্যাসিস্ট দল ও মুসোলিনির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ও এই দলকে আর্থিক সহায়তা করতে থাকেন।
⑦ ফ্যাসিবাদ ও মুসোলিনি:
বিশ্বযুদ্ধোত্তর দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করে মুসোলিনি বেকার যুবকদের নিয়ে আধাসামরিক বাহিনী হিসেবে ফ্যাসিস্ট দল গঠন করেন। অচিরেই সাম্যবাদ বিরোধী ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে সাম্যবাদীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
ইতোমধ্যে 1921 খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট দল ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করে ও অন্যান্য উপায়েও আইনসভায় মাত্র 31 টি (মতান্তরে 35 টি) আসন লাভ করে। ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল অসম্ভব দেখে মুসোলিনি বলপ্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দাবি করেন, ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে বলপ্রয়োগ দ্বারা ইতিহাসের গতি নির্ধারিত হতে দেখা যায় ও ইটালিতে সেই সময় আসন্ন।
মুসোলিনির আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার সশস্ত্র ফ্যাসিস্ট স্বেচ্ছাসেবক রাজধানী রোমে ঢুকে পড়লে ইটালির রাজা তৃতীয় ভিক্টর ইম্যানুয়েল ভীত হয়ে পড়েন। তিনি ক্ষমতাসীন মন্ত্রীসভাকে বাতিল ঘোষণা করে মুসোলিনিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন (30) অক্টোবর, 1922 খ্রিস্টাব্দে)।
এই ভাবে মুসোলিনির নেতৃত্বে ইটালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান সম্পূর্ণতা লাভ করে।