হিটলারের রাশিয়া অভিযান ও তার বিরুদ্ধে রুশ প্রতিরোধ কী ছিল? |
ভূমিকা :
1941 খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বলকানে অনুপ্রবেশ এবং যুগোশ্লাভিয়া ও রুমানিয়া দখল ছিল রাশিয়া অভিযানের পূর্বাভাস।
হিটলারের রাশিয়া অভিযানের উদ্দেশ্যঃ
রাশিয়া আক্রমণের কারণ:
① রুমানিয়া ও তিনটি বাল্টিক রাজ্য নিয়ে রুশ-জার্মান মতবিরোধ ঘটে এবং রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে হিটলার রুশ আক্রমণের সম্ভাবন্ধু নায় শঙ্কিত হন। তাই তিনি রাশিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ② রুশ-জার্মান চুক্তি ছিল হিটলারের কূটনৈতিক বিভ্রান্তি সৃষ্টির কৌশল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়া জার্মানিকে খাদ্য, রসদ ও খনিজদ্রব্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে হিটলার ক্ষুব্ধ হন। ④ দার্দানেলিশ প্রণালীর উপর সোভিয়েত আধিপত্যের দাবিও জার্মানি মানতে রাজি হয়নি। ⑤ হিটলার মনে করেছিলেন যে, রাশিয়াকে পরাজিত করার পর রুশ সীমান্তের জার্মান বাহিনীকে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যাবে। রাশিয়ার শস্যভাণ্ডার ইউক্রেনের দাম ও বাকুর তৈলখনি দখল করাও ছিল হিটলারের অন্যতম উদ্দেশ্য।
মহাশক্তিজোট গঠন ও অভিযান:
জার্মানির রাশিয়া অভিযানকে ইতিহাসের বৃহত্তম অভিযান বলা হয়। 1941 খ্রিস্টাব্দের 22 জুন 40 লক্ষ সৈন্য, 3300 ট্যাঙ্ক 35 হাজার বিমানসহ রুশ-জার্মান সেনাদল ভন পাউলাসের নেতৃত্বে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে রাশিয়ায় ঢুকে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ইঙ্গ-রুশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আমেরিকা প্রথম দিকে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেয়নি। কিন্তু লেন্ড-লিজ আইন দ্বারা 1941 খ্রিস্টাব্দের 1 অক্টোবর থেকে 1942 খ্রিস্টাব্দের 1 জুলাই পর্যন্ত প্রতি মাসে 400 বিমান, 500 ট্যাংক ও অন্যান্য সমরসম্ভার সোভিয়েত রাশিয়াকে পাঠাতে থাকে।
ইটালির পতনঃ
1943 খ্রিস্টাব্দে ইটালি অধিকৃত ত্রিপোলির পতন ঘটে। 1943 খ্রিস্টাব্দের 25 জুলাই ইটালিরাজ তৃতীয় ভিক্টর ইম্যানুয়েল মুসোলিনিকে বরখাস্ত করেন। 3 সেপ্টেম্বর ইটালির নতুন সরকার মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জার্মানির প্রতিরোধ সত্ত্বেও মিত্রবাহিনী 1 সেপ্টেম্বর নেপলস দখল করে। শেষ পর্যন্ত 1944 খ্রিস্টাব্দের 4 জুন মিত্রবাহিনী রোমে প্রবেশ করলে 1945 খ্রিস্টাব্দে উত্তর ইটালিতে মিত্রবাহিনীর অভিযান সম্পন্ন হয়।
জার্মানির আত্মসমর্পণ:
1941 খ্রিস্টাব্দের অভিযানে জার্মানি রাশিয়ার ৪ লক্ষ বর্গমাইল এলাকা দখল করে নেয়। লেনিনগ্রাদ অবরোধ করে জার্মান বাহিনী মস্কোর খুব কাছে উপস্থিত হয়। কিন্তু 9 আগস্ট থেকে রুশ প্রতিরোধ শুরু হয়।
লেনিনগ্রাদে স্মলেনেস্ক মার্শাল টিমোশোঙ্কো জার্মান আক্রমণ প্রতিহত করেন। রুশ সেনারা পোড়ামাটি নীতি নিলে জার্মান বাহিনী লেনিনগ্রাদকে মুক্ত করে স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধ চালায়। 17 জুলাই থেকে 18 নভেম্বর পর্যন্ত এই যুদ্ধ ছিল রাশিয়ার পক্ষে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ। 19 নভেম্বর থেকে 1943 খ্রিস্টাব্দের 2 নভেম্বর পর্যন্ত বলে রুশ সেনার পালটা আক্রমণ ছিল সেনাপতি ঝুকভের নেতৃত্বে। 1943 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে জার্মান সেনাপতি পাউলাস আত্মসমর্পণে বাধ্য হন। শেষ জার্মান ‘বাহিনী 2 ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধ ছিল সবথেকে ভয়াবহ। এই যুদ্ধে জার্মান বাহিনীর দর্প চূর্ণ হয় এবং লালফৌজের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। এই যুদ্ধের পর রুশ বাহিনী পোল্যান্ড দিয়ে জার্মান সীমান্তে চলে আসে।
জাপানের আত্মসমর্পণ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিঃ
শেষ পর্যন্ত 1945 খ্রিস্টাব্দের 6 ও ৭ আগস্ট আমেরিকা যথাক্রমে জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহরে আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর জাপান আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। 1945 খ্রিস্টাব্দের 2 সেপ্টেম্বর জাপানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়।